Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ময়মনসিংহের আসলামের প্রদর্শনীতে সাড়ে ৩শ বছরের পুরনো সারিন্দা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ মে ২০২২ ১৪:১২

ময়মনসিংহ: সুরের সাধনার পাশাপাশি মানবিকতার চর্চার প্রসার ঘটিয়েছিলেন বাউলরা। এসব বাউলদের ব্যবহৃত প্রায় তিনশ বছরের পুরনো সংগীতযন্ত্র ‘সারিন্দা’ নিয়ে সুরপ্রেমী ব্যবসায়ী রেজাউল করিম আসলাম আয়োজন করেছেন বিশেষ প্রর্দশনী। আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়ামের আয়োজনে ময়মনসিংহে চলছে এই ‘শতবর্ষী সারিন্দা প্রদর্শনী’।

নোভিস ফাউন্ডেশন ও ময়মনসিংহ বাউল সমিতি’র সহযেগিতায় বুধবার (১৮ মে) ময়মনসিংহ আঞ্জুমান ইদগাহ মাঠের বিপরীত দিকে কাঁচিঝুলি ব্যাপটিস্ট চার্চ গির্জার নিচতলায় এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম গ্যালারি হলে উদ্বোধন করা হয় এই প্রদর্শনীর। তিন দিনের প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল শুক্রবার (২০ মে) পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উম্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী।

বিজ্ঞাপন

কেবল সারিন্দা প্রদর্শনী নয়, তিন দিনের এই আয়োজনে রয়েছে পুঁথি পাঠ, বাউল বৈঠক, শিশুদের সংগীত ও যন্ত্রসংগীত। আয়োজনটিকে সফল করতে সমন্বয়কারী হিসেবে রেজাউল করিম আসলামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে জয়িতা অর্পা ও শৈল্পিক নির্দেশনায় আরেক মেয়ে জাওয়াতা আফনান কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রদর্শনীতে রেজাউল করিম আসলামের সংগ্রহ থেকে দেখানো হচ্ছে সতেরশ থেকে উনিশশ শতাব্দীর ১২টি দুর্লভ সারিন্দা। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের পচাঁত্তর বয়সী রহমান ফকিরের কাছ থেকে পাওয়া ৩৬৫ বছরের পুরনো একটি সারিন্দা রয়েছে। আরও রয়েছে লালমনিরহাটের গুনধর বাবুর কাছ থেকে পাওয়া ৩০০ বছরের এবং একই জেলার দূর্গাপুরের মনা সাধুর কাছ থেকে পাওয়া ২৫০ বছরের পুরানো সারিন্দা।

এছাড়াও ময়মনসিংহের গৌরীপুরের পঞ্চাশোর্ধ্ব মোক্তার হোসেন ফকিরের কাছ থেকে পাওয়া তার চার প্রজন্মের ব্যবহৃত পুরানো সারিন্দা রয়েছে আসলামের সংগ্রহে। এটি ব্যবহার করেছেন মোক্তার ফকিরের বাবা রমজান আলী ফকির, দাদা ইয়াছিন ফকির, ইয়াছিন ফকিরের বাবা জমির ফকিরও। হালুয়াঘাট থেকে পাওয়া কীর্তিনিয়া মনীন্দ্র ওস্তাদজির ব্যবহৃত ১৫০ বছরে পুরানো সারিন্দাও রয়েছে এখানে।

বিজ্ঞাপন

রেজাউল করিম আসলাম মূলত একজন বাদ্যযন্ত্র ব্যবসায়ী ও লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রাহক। তার সংগ্রহে রয়েছে লুপ্তপ্রায়, বিলুপ্ত ও চলমান প্রায় ৬০০ বাদ্যযন্ত্র। তিন পুরুষ ধরেই এই বাদ্যযন্ত্র ব্যবসায় বংশ পরম্পরায় যুক্ত আসলাম। ময়মনসিংহ নগরীর বড় বাজার জিকেএমসি সাহা রোডে রয়েছে ‘নবাব অ্যান্ড কোং’ নামে আসলামের একটি বাদ্যযন্ত্র প্রতিষ্ঠান।

প্রর্দশনী নিয়ে আসলাম বলেন, প্রস্তুতকারক, বাদক, উপকরণ সবই হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় সারিন্দা ছিল খুবই মূল্যবান যন্ত্র। যারা বাজাতেন তারাও ছিলেন মরমী লোক। এগুলো হারানোর বা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য এই উদ্যোগ।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার উপ-কিপার মুকুল দত্ত বলেন, এ ধরনের আয়োজন আরও বেশি হওয়া উচিত। তাহলে বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছালে আমাদের লোকজ সম্পদ ও লোকজ ঐতিহ্য রক্ষা পাবে। সারিন্দা নিয়ে প্রবাদ রয়েছে— আমি কই কী, আমার সারিন্দা বাজায় কী। প্রবাদটির অর্থ হলো— কথায় ও সঙ্গতে মিল নেই। অর্থাৎ আমরা যা বলি, তার সঙ্গে কাজের মিল নেই। প্রবাদটি সবার কাছে পরিচিত হলেও যে বাদ্যযন্ত্রটি নিয়ে এটি রচিত, সেই সারিন্দা যন্ত্রটি সবার কাছে অপরিচিত। কালের বিবর্তনে এটি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এ ধরনের আয়োজন থাকলে হয়তো বিলুপ্তপ্রায় এমন অনেক যন্ত্রই রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/টিআর

এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম রেজাউল করিম আসলাম সারিন্দা প্রদর্শনী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর