‘সংসদকে তামাকবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই’
১৯ মে ২০২২ ১৭:০৫
জাতীয় সংসদকে তামাক ও ধূমপানবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চান বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার।
তিনি বলেন, সামনে বাজেট সেশন আসছে। সেখানে অন্তত ১ মিনিট হলেও তামাকের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। জাতীয় সংসদকে আমরা ধূমপানবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাহলেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) কক্সবাজারে চলমান ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক সংসদ সদস্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিন দিনের এই সম্মেলনে ৪০ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করছেন।
সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, আমরা তামাকের বিরুদ্ধে যেসব কমিটমেন্ট করছি, সেগুলোকে আরও দৃঢ় করতে হবে। এখানে আজ যে ৪০ জন সংসদ সদস্য আছেন, তাদের কেউ বলেননি ধূমপান ভালো, তামাক ভালো। এগুলো আমাদের মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে পারব।
কনফারেন্সের দ্বিতীয় দিনে দুইটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেশন দুইটিতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ। আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, শেরিন আক্তার, শিরীন আখতারসহ প্রায় ৩৫ জন সংসদ সদস্য।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক রুহুল হক বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পর কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায়, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গ্রামে গ্রামে গিয়ে তামাক ব্যবহারের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। আমরা সবাই আছি তামাকবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে। আমি আশা করব আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা দেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই সাধনাকে শক্তিশালী করবে। আজ থেকে আমাদের স্লোগান হোক— আমরা তামাকমুক্ত হতে চাই।
এদিন এর আগে দু’টি সেশনে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন। অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা, অ্যারোমা দত্ত ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বাতিল করা, ডা. শামিল উদ্দিন শিমুল তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রদর্শন বন্ধ করা এবং তামাক কোম্পানির সিএসআর বন্ধ করার বিষয়ে আহসানুল হক টিটু উপস্থাপনা প্রদান করেন।
এর আগে, অধ্যাপক আব্দুল আজিজ তার উপস্থাপনায় বলেন, হিটেড ট্যোবাকোর পক্ষে ফেসবুসহ বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় ই-সিগারেটের প্রচার ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনলাইন মার্কেটে অর্ডার দিলে এখন এসব পণ্যে ঘরে এসে দিয়ে যায়। কিন্তু ই-সিগারেট যে তামাকের সিগারেটের মতো ক্ষতি করে, তা অনেকেই জানে না। আমার মনে হয় এখনই সময় যে ই-সিগারেটকে নিয়ন্ত্রণ করে আইনের অধীনে নিয়ে আসা।
গ্লোবাল ট্যোবাকো অ্যাটলাসের গবেষণার তথ্য তুলে ধরে অ্যারোমা দত্ত বলেন, এটি খুবই হতাশাজনক যে একজন রোগী যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে যান, তখন তিনি পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। কারণ, আমাদের ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে অসুস্থ হচ্ছেন। এর বাইরেও ৪২ দশমিক ৭০ মানুষ আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র, ৪৯ দশমিক ৭০ শতাংশ রেস্তোরাঁ, ৮ দশমিক ২০ শতাংশ স্কুল, ৩৯ শতাংশ বাড়ি ও ৪৪ শতাংশ গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এই বিষয়গুলো থেকে বের হয়ে আসার অন্যতম উপায় হতে পারে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে।
কনফারেন্সে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে সংসদ সদস্যদের এই উদ্যোগে অংশ নিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। তামাক নির্মূল করতে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি। আপনারা আমাকে আপনাদের পরামর্শ দেবেন। যদি আমার দিক থেকে আরও কিছু করতে হয়, আমি করব। এটি সত্যি, তামাকের ব্যবহার এখনো আমরা যথেষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আইনেও কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। সেগুলো দূর করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা যেতে পারে।
২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজিত এই কনফারেন্সটি আয়োজন করেছে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং’ সার্বিক সহায়তায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো-ফ্রি কিডস বাংলাদেশ।
সারাবাংলা/টিআর