Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ে সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্পে সেচ সংকট নিরসন, জমি হবে বহুফসলি

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ মে ২০২২ ০৮:২৫

ছবি: সারাবাংলা

রাঙ্গামাটি: সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছেন রাঙ্গামাটির সাপছড়ি ইউনিয়নের কৃষকরা। এই সেচ সুবিধায় বোরো আবাদ করে বাড়তি ফসল উৎপাদন করতে পেরে খুশি কৃষকরা। শুরুতে পাইলট প্রকল্প হিসবে যেসব কৃষক ধান আবাদে অনাগ্রহী ছিলেন, তারাও এবার বোরো ধান আবাদের কথা ভাবছেন। শুধু তাই নয়, সেচ সুবিধা পেয়ে তারা একফসলি জমিকে বহুফসলি জমিতে রূপান্তরের কথা ভাবছেন। এদিকে, সেচ সুবিধা পেলেও ধানক্ষেতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমাধানের জন্য পাঁকা সেচ ড্রেন তৈরির দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর গ্রামের প্রায় ১৭ একর কৃষি জমিতে এতদিন বর্ষা মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ হতো। এর বাইরে বছরের বাকিটা সময় সেসব জমি পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে থাকত। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই গ্রামের কৃষকদের বোরো আবাদে উৎসাহিত করতে ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে সেচ সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পের (সিসিআরপি) আওতায় সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্প বসানোর পরিকল্পনা হয়। ৫ লাখ টাকার পাইলট প্রকল্পটির কার্যক্রমে অংশ নেয় স্থানীয় ১০-১২টি কৃষক পরিবার, পড়ে থাকা জমিতে আবাদ করেন বোরো ধান।

পাহাড়ি এই জমিতে বোরো আবাদ আলোর মুখ দেখবে কি না— এমন আশঙ্কা থেকে ওই এলাকার বেশিরভাগ কৃষকই পাইলট প্রকল্পের আওতায় বোরো ধান আবাদে আগ্রহী হননি। কিন্তু মৌসুম শেষে প্রতি কানিতে (এক কানি সমান ১ দশমিক ২০ বিঘা) ২০ মণ হারে ধান উৎপাদন হয়েছে বোরো আবাদি এসব জমিতে। এতে আগামী মৌসুম থেকে অন্যান্য কৃষকরাও তাদের জমিতে বোরো আবাদের আগ্রহী হয়েছেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটির অধীনে স্থানীয় ৩০টি কৃষক পরিবার সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

উপকারভোগী কৃষকরা জানান, ৬০-৭০ বছর আগে উঁচু ও ঢালু পাহাড় কেটে সমান করে জমিগুলো তৈরি করা হয়েছিল। তবে পানি সংকট বা সেচ ব্যবস্থাপনার অভাবে বর্ষা মৌসুমে আউশ ধান আবাদ ছাড়া বাকি সময়ে আর কোনো চাষাবাদ করা হতো না। অর্থাৎ এগুলো একফসলি জমি হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে সেচ সংকট লাঘব হওয়ায় সেচের পানিতে বোরো আবাদের সুযোগ পেয়েছেন তারা।

কৃষকরা জানালেন, এবারের বোরো মৌসুমে কৃষকরা উচ্চফলনশীল (উফশী) ও হাইব্রিড (সংকরজাত) ধানের বীজ রোপণ করেন। তাতে ভালো ফলন পেয়েছেন। তাই বোরো আবাদের পাশাপাশি অন্যান্য ফসল আবাদের কথাও ভাবছেন পাহাড়ি এলাকার এই কৃষকেরা।

১১০ নং শুকরছড়ি মৌজার অধীন বোধিপুরগ্রামের কারবারি (গ্রামপ্রধান) বিজয় কুমার চাকমা (৬৮) বলেন, পুরো এলাকাতে ১৭ একর কৃষি জমি রয়েছে। সেচের পানির অভাবে এগুলো এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা দেখেছি, আমাদের বাপ-দাদাদের আমল থেকে এসব জমিতে বছরে একবার আউশ ধান চাষ হচ্ছে। সেচের পানির অভাবে আমরাও বছরে একবার আউশ ধান লাগাই। এবার সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থার সুযোগ করা হলেও সবাই বোরো আবাদে আগ্রহ হননি। তবে শেষ সময়ে এসে অনেকেই অন্যান্য স্থান থেকে বীজতলা কিনে এনে জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন। এখন দেখা গেছে, একেকজন কৃষক কানিপ্রতি ২০ মণ করে ধান পেয়েছেন। তাই আগামী বছর থেকে সবাই চাষাবাদের আওতায় আসলে ৩০ পরিবার এর সুফল পাবেন।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

বোধিপুর গ্রামের কৃষক শুক্রকুমার চাকমা (৬৩) বলেন, আমি তিন কানি জমিতে এবার প্রথমবারের মতো বোরো ধান আবাদ করেছি। পুরো জমিতে ৬০ মণের মতো ধান পেয়েছি। বর্ষা মৌসুমে আউশ ধান আবাদ করেও এমন ধান পেয়েছি। আশা করছি, এখন থেকে এক ফসলি হিসেবে পরিচিত এই জমিতে আউশ ও বোরো ছাড়াও অন্যান্য ফসল আবাদ করতে পারব। তাকে আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা তৈরি হবে।

একই এলাকার কৃষক হেমন্ত কুমার চাকমা (৪২) বলেন, এ বছর আমরা অনেকটা তাড়াহুড়ো করে জমিতে ধান লাগিয়েছি। ফলন হবে কি না— এই দ্বিধা থেকে অনেকেই বোরো আবাদ করেননি। এখন মৌসুম শেষে ভালো ফলন পেয়ে আমরা কৃষকরা সবাই খুশি। আমাদের লাভ দেখে অন্যান্য কৃষকরাও আগামী মৌসুমে বোরো ধান লাগাবে বলে জানিয়েছে।

হেমন্ত শুক্র ও বিজয় চাকমাদের বোরো আবাদের সাফল্য দেখে স্থানীয় কৃষক নীলচন্দ্র চাকমা, কলিঙ্গ চাকমা, নীরু চাকমারা আগামী মৌসুম থেকে বোরো আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। তবে সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্পে সেচের সংকট মিটলেও সেচ ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের। ড্রেনেজ সিস্টেমের মাধ্যমে সেচের পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। বলছেন, ধানক্ষেতের আইলের মাঝখান দিয়ে ড্রেন তৈরি করা গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

এদিকে, প্রকল্প থেকে সহায়তা করা সৌরবিদ্যুৎ ও পানির পাম্পটি রক্ষণাবেক্ষণ-পরিচালনার জন্য নিজেরা তহবিল তৈরি করছেন কৃষকরা। গ্রামপ্রধান বিজয় কুমার চাকমা জানান, সোলার ও সেচ পাম্পটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিমাসে পরিবারপ্রতি ২০ টাকা হারে ৩০টি পরিবার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আবার বোরো মৌসুমে ধান ঘরে তোলার পর প্রতি কৃষক পরিবার কানিপ্রতি ২০০ টাকা করে বাৎসরিক অর্থ জমা দেবেন। এই অর্থ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত করা হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পের (সিসিআরপি) রাঙ্গামাটি জেলার কারিগরি কর্মকর্তা সুশীল চাকমা বলেন, ড্যানিডার অর্থায়ন ও পার্বত্য জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে সিসিআরপি প্রকল্পের অধীন বোধিপুর এলাকার এক ফসলি জমিকে বহুফসলি জমিতে রূপান্তর করা ও স্থানীয় কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার লক্ষ্যে সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষি জমিতে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছেন।

তিনি বলেন, পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম বছর সব কৃষক বোরো আবাদ না করলেও আগামী বছর থেকে সবাই বোরো আবাদ করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এতে করে তারা আরও সাবলম্বী হবেন বলে আমরা মনে করি।

সুশীল চাকমা আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৪ হাজার ২০০ ওয়াটের সোলার প্যানেল, পানির পাম্প, রিজার্ভার ও পাইপ লাইন ও আনুষাঙ্গিক খরচসহ ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে স্থানীয় চাষিরা সেচ সুবিধার জন্য পাকা ড্রেন তৈরি করার দাবি জানাচ্ছেন। আমরা ড্রেন ব্যবস্থাপনার জন্য আরেকটি উপপ্রকল্প হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এটি পাস হলে কৃষকের ড্রেনেজ সংকটও কেটে যাবে।

সারাবাংলা/টিআর

রাঙ্গামাটি সেচ সংকট নিরসন সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্প


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

এখনো সালমানকে মিস করেন মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৩

সালমান শাহ্‌কে হারানোর ২৮ বছর
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৪

সম্পর্কিত খবর