‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব’
২১ মে ২০২২ ১২:৪৬
ঢাকা: সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ালে জনজীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠন।
শনিবার (২১ মে) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই আইকনিক টাওয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় এফবিসিসিআই ও বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে বহুমাত্রিক মূল্যস্ফীতি উসকে দিয়ে এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব হবে। ফলে কৃষি, শিল্প, সেবা এবং সার্বিকভাবে সাধারণ জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে। সর্বোপরি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে।
তিনি বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্য বৃদ্ধির আবেদনপত্র পর্যালোচনা করলে স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয় যে, বিদ্যুৎখাত বার্ক আইনের বিধান অনুযায়ী স্বচ্ছতা, মানসম্মত, দক্ষতা ও জবাবদীহিতা সহকারে সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে না। বরং এই খাতের সর্বত্র অদক্ষতা, যথেচ্ছ অনিয়ম, অস্বচ্ছতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং আইনের বিপরীতে পরিচালিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার না করে এ খাতে বিরাজমান অপব্যবস্থাপনার অহেতুক দায়ভার জাতীয় অর্থনীতি এবং জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সকল ক্ষেত্রে সংক্রমিত করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। তবে কোভিড এবং ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী বিরাজমান সংকটময় পরিস্থিতি প্রশমিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সরকারের একটি আত্মঘাতি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কোভিড এবং ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, শিপিং ও পরিবহন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় রফতানি খাতের পক্ষে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস আরও বেড়ে যাবে। ফলে আমাদের উৎপাদন ও রফতানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। এছাড়াও জাতীয় ভিশন-২০৪১, এসডিজি-২০৩০ অর্জন ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, এমতাবস্থায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবটি আপাতত স্থগিত করে কোভিড এবং ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী বিরাজমান সংকটময় পরিস্থিতি প্রশমিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে সাধারণ জনগনকে স্বস্তি দেয়ার পাশাপাশি শিল্পখাতের সক্ষমতা বজায় থাকবে। সার্বিক অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেসাথে আমরা জাতীয় ভিশন-২০৪১, এসডিজি ২০৩০ অর্জন ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।
তিনি আরও বলেন, এখন কুইক রেন্টালের প্রয়োজন নেই। এগুলো হাই রেট। পর্যায়ক্রমে এর ভার আমাদের ওপর এসেই পড়ছে।
অবৈধ গ্যাস লাইন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অবৈধ গ্যাস লাইন বন্ধ করতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদেরও এগিয়ে আসতে হবে। না বুঝে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যে এই প্রস্তাব (গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব) করা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এএম