১১ দিন গ্যাস বিচ্ছিন্ন কামরাঙ্গীরচর, দীর্ঘ হচ্ছে সংকট
২১ মে ২০২২ ১৪:৪৬
ঢাকা: টানা এগার দিন গ্যাস সুবিধা নেই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে। ফলে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাটির বাসিন্দারা। তারা বলছেন, অন্যের অপরাধের দায় কেন তারা নেবেন?
এদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি বকেয়া আদায়ে এ করকম কোমর বেঁধেই মাঠে নেমেছে তিতাস। তিতাসের অভিযানের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কামরাঙ্গীরচর এলাকার সব ধরনের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ভোগান্তি আরও দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তিতাস সূত্রে জানা গেছে, কামরাঙ্গীরচর এলাকা শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক মিলিয়ে বৈধ গ্রাহকের সংখ্যা ১২ হাজারের মতো। এর বাইরে লক্ষাধিক রয়েছে অবৈধ সংযোগ।
তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে— এখানে শুধু অবৈধ গ্রাহকই নয়, রয়েছে মোটা অংকের বকেয়া। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বকেয়া আদায় করতে গত ১০ মে থেকে কামরাঙ্গীরচরে অভিযান শুরু করে তিতাস। ওই অভিযান পরিচালনার সময় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গে বৈধ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এখানকার মানুষ।
সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ অবৈধ সংযোগের পাশাপাশি তাদের বৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কামরাঙ্গীরচর এলাকার মাঝের গলির গৃহিনী নাজমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তাই ছাদে ইটের চুলা বানিয়ে সেখানে রান্না করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন চরম কষ্ট হচ্ছে। এভাবে কতদিন চালানো সম্ভব?’
একই এলাকার নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমরা বৈধ গ্রাহক। এরপরও আমাদের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমরা খুব বিপদে আছি।’
পাশের গলির বাড়ি মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে তিতাসের বৈধ গ্রাহক। আমার কোনো বিল বকেয়া নেই।’
তিনি বলেন, ‘যারা অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছে তাদের ধরা হোক। কিন্তু যারা বৈধ গ্রাহক তাদের কেন বিপাকে ফেলা হচ্ছে?’
এদিকে তিতাস থেকে জানিয়ে দিয়েছে সকল অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না।
বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুরের কামরুল ইসলাম কমিউনিটি সেন্টারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কয়েকজন গ্রাহকদের সঙ্গে তিতাস কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে। ওই বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয় অবৈধ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন কর্মকর্তা জানান, আমরা আগামী ২৩ মে থেকে আবার অভিযান শুরু করব। কামরাঙ্গীরচর এলাকায় শুধু অবৈধ সংযোগ সমস্যা না, বৈধ গ্রাহকদের কাছে বিল পাওনা রয়েছে ৬৭ কোটি টাকার বেশি। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বকেয়া বিলও আদায় করতে হবে। এগুলো শেষ হলেই বিচ্ছিন্ন সংযোগে আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।’
তিতাসের দাবি— স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা এই সাময়িক কষ্ট মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে সাধারণ গ্রাহকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের চুলা ব্যবহার করে দিন পার করছেন গ্রাহকরা। ফলে তাদের ভোগান্তি বাড়ছে।
সারাবাংলা/জেআর/একে