ঘাটতি বাজেট মোকাবিলায় ১ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ চায় সরকার
২১ মে ২০২২ ২২:১৭
ঢাকা: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট মোকাবিলায় প্রথমবারের মতো সরকারের ব্যাংক ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আসন্ন বাজেটে ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২৫ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ বেড়ে ৮৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্র সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আসছে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সঞ্চয়পত্র নির্ভরতা কমিয়ে আনার পর ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ নেওয়া হয় ৭৯ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নেওয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা এবং এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত দুই-তিন বছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় কমলেও সেটি আবার একটু একটু করে বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা (মূল বাজেটে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার কোটি ১৯৭ কোটি টাকা)। একই অর্থবছরে ব্যাংক-বহির্ভূত অন্যান্য খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ২১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা (মূল বাজেটে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা)। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে ব্যাংক-বহির্ভূত অন্যান্য খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।
জানা গেছে, আগামী ৯ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উপস্থাপন করবেন। এটি হবে অর্থমন্ত্রীর টানা চতুর্থ বাজেট এবং বাংলাদেশ সরকারের ৫২তম বাজেট। এবার প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, বা ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বেশি। আসছে বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এটি মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
অন্যদিকে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে হিসাবে ঘাটতি কমছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম
১ লাখ কোটি টাকা ঘাটতি বাজেট জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ ব্যাংক ঋণ সরকার