এসডিজি অর্জনে পরিবেশ আইন ও নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে
২১ মে ২০২২ ২২:৩৪
ঢাকা: বাংলাদেশে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাইলে পরিবেশগত সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। আর পরিবেশগত সুশাসন নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন পরিবেশ আইন ও নীতিগুলো বাস্তবায়ন। ‘বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইনের ভূমিকা এবং পরিবেশগত সুশাসন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে।
শনিবার (২১ মে) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনের এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাপার অর্থ, বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর এসডিজিবিষয়ক সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) বাংলাদেশের বিশেষ দূত, ওয়ার্ল্ডইকোনমিক ফোরাম ও বায়োডাইভারসিটিজ কমিশনের কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র নির্বাহী সদস্য ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইইডি) সিনিয়র ফেলো এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের পরিচালক ড. সালিমুল হক। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বাপা’র কোষাধ্যক্ষ মহিদুল হক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক কামরুজ্জমান মজুমদার, হুমায়ন কবির সুমনসহ বাপার অন্যান্য নেতা উপস্থিত থেকে মূল্যবান মতামত দেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. সাঈদা নাসরিন এবং বাপা’র নির্বাহী সদস্য ও অর্থ, বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব, এমএস সিদ্দিকী প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের অধিকার প্রচার এবং এসডিজি অর্জনের জন্য পরিবেশগত শাসন গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশগত আইনের শাসন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের উপর নির্মিত- শক্তিশালী আইনি কাঠামো, কার্যকর রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, এবং বিচারিক প্রতিষ্ঠান, তথ্য এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ। বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি আইন রয়েছে। তবে পরিবেশ আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই এটি কার্যকর হবে। পাশাপাশি টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।’
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ জনিত কারণে টেকসই লক্ষমাত্রা অর্জন্য ব্যহত হয়েছে, যা মোকাবিলায় নতুন কৌশল প্রণয়নের উপর জোর দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের জন্য আইনের শাসন গুরুত্বপূর্ণ। এটি অর্জনের জন্য পরিবেশ সুরক্ষাসহ একটি শক্তিশালী মানবাধিকারভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন এবং মহামারি দ্বারা ব্যাহত হওয়া এসডিজি অর্জনের জন্য বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা এবং কৌশলগুলো ফের ডিজাইন করতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অধিকাংশ উন্নত দেশ উন্নয়ন করে যাবে। কিন্তু তাদের এ উন্নয়নের ফলে পরিবেশের ক্ষতির কথা আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলো বলতে পারবে না। তারা আমাদের কথা শুনবে না। আমরা বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটি অ্যাক্ট করেছি। পরিবেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্লাটফর্ম করেছি যেখানে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। আজ যে আলোচনায় যে সুপারিশগুলো এসেছে সেগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে বাস্তবায়নের জন্য পৌঁছে দেওয়া হবে।’
বিশ্বের ৫৫টি দেশের সদস্যদের নিয়ে একটি পার্লামেন্টেরিয়ান ভালনারেবল ফোরাম করা হয়েছে। যেটি একযোগে কাজ করবে। তিনি বাপাকে মুল সংগঠন ধরে একটি ফোরাম করার প্রস্তাব করেন। যারা দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত যেসমস্ত আইন কার্যকর বা বাস্তবায়ন হচ্ছে না সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সেকশন ফর ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্ট পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। নদী অধিকার আসলে মানুষের অধিকার। পরিবেশের সুরক্ষা সাধারণ মানুষের মধ্যে, স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে এবং বিজনেস ম্যানদের মধ্যেও রয়েছে। আজকের যে সুপারিশগুলো এসেছে তা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। আমি আশা করব, এগুলো সরকারের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছাবে এবং তারা সেগুলো দেশের পরিবেশের স্বার্থে বাস্তবায়ন করবে।’
ড. সালিমুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অ্যাডভোকেসি করে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে। দেশের যে আইন বিদ্যমান আছে তা দিয়ে পরিবেশ রক্ষায় অনেক কিছু করার সম্ভাবনা আছে। আমরা আমাদের নিজেদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতে পারলে বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং কর্মকর্তারাও সঠিক পথে চলতে বাধ্য। বাপা’র সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক কাজ করতে পারি। নতুন প্রজন্মের মাঝে পরিবেশের বিষয়গুলো পৌঁছে দেওয়াও আমাদের দায়িত্ব।’
কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘সরকারের মেকানিজমকে সামনে রেখে চিন্তা ভাবনা করলে আমাদের চলে না। আমাদের যেতে হবে সকল স্টেকহোল্ডারের কাছে। সরকারের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষকেও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।’
স্বাগত বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, ‘আলোচনা এবং পর্যালোচনা মধ্য দিয়ে যাতে আগামী দিনের পরিবেশের জন্য ধংসাত্নক না হয সে জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জন করতে সরকারকে সর্বাত্নক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকে পরিবেশ রক্ষায় নানা কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশে আমাদের যে ইন্ডিকেটর আছে সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, কতটুকু নিরীক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে- তা গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।’
ড. সাইদা নাসরিন বলেন, ‘পরিবেশের বিষয়গুলোর ভিত্তি আছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের কোনো ক্ষমতা রাখা হয়নি। সাধারণ জনগনকে সচেতন করতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে খুব বেশি কাজে লাগাতে হবে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত। বর্তমান প্রজন্ম এক সময় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবে। তাই তাদের পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে হবে ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’
এমএস সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশে পোশাক কারখানা জন্য কোন এটিপি নেই। অথচ বিদেশে যেকোনো কারখানা বানানোর জন্য অবশ্যই এটিপি থাকতে হয়। উন্নত দেশগুলো পরিবেশ ধংশের জন্য দায়ী কিন্তু এর দায়ভারটা সবার। কারও সুনির্দিষ্টভাবে বেশি হতে পারে, কিন্তু দায়ভারটা আমাদের সবারই। সুতরাং সেখানে আমাদের একটা প্রচেষ্টা বিভিন্ন ফোরামে বলা। পরিবেশ আইনগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক যে সব দায়-দায়িত্ব আছে সেগুলো কীভাবে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে আনতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।’
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম