অর্থনীতি সমিতির ২০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব
২২ মে ২০২২ ১৮:৫৭
ঢাকা: আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ৩৩৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ উৎস রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
রোববার (২২ মে) অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩: একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। বাজেট অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে আবুল বারকাত বলেন, ‘প্রস্তাবিত জনগণতান্ত্রিক ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছি। এটি বর্তমান বাজেটের তুলনায় ৩.৪ গুণ বেশি। যেখানে ৩৩৮টি সুপারিশ রয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— সমাজ থেকে চার ধরনের বৈষম্য যথা- আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য ক্রমাগত হ্রাস করে নির্মূলের দিকে যাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজেটে মোট বরাদ্দে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। এখানে মোট বাজেটের ২১ শতাংশ বরাদ্দ। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি, তৃতীয় হচ্ছে কৃষি খাত।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সবধরনের বৈষম্য বেড়েছে। এসব পাল্টাতে হবে, ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। সেজন্য আমরা গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চায় অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। গবেষণা উন্নয়নের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমরা গবেষণা উদ্ভাবন বিচ্ছুরণ ও উন্নয়ন নামে নতুন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করছি। এই মন্ত্রণালয়ের জন্য আগামী পাঁচ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলছি। আরেকটি মন্ত্রণালয় কথা আমরা বলেছি সেটা হলো গণপরিবহন মন্ত্রণালয়।’
আবুল বারকাত বলেন, ‘আগামী বাজেটে অর্থায়নের প্রান্তিক, দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্য মধ্যবিত্তের ওপর কর দাসত্ব আরোপ করা যাবে না। এরপর রয়েছে সামাজিক সুরক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের সুপারিশ। বাজেটে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। শর্ত হলো কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।’ সরকার মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দিচ্ছে তা বাস্তবসম্মত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের চলমান মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে আবুল বারকাত বলেন, ‘মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ঋণ নিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট। সেটি হলো- যখন থেকে আমরা অন্তত ৪/৫টি মেগাপ্রকল্পের সুদ পরিশোধ শুরু করব, তখন থেকেই ঋণের ক্ষেত্রে সরাসরি আমরা রেড জোনে চলে যাব। যা আনুমানিক হিসাবে আগামী ২০২৭-২০২৮ সালে শুরু হওয়ার কথা। আর ২০৩২ সালে যখন ১২টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে করতে হবে, তখন বিপদ আরও প্রকট হওয়া আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই সংকট সমাধানে নতুন কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া যাবে না। প্রজেক্টের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। বৈশ্বিক মহামন্দা, বৈশ্বিক মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব ভবিষ্যতে আমাদের বৈদেশিক ঋণের রেড ঝুঁকিতে ফেলবে। এটা নিয়ে কঠিন চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে।’
আবুল বারকাত বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে বলেছি। কারণ, পরোক্ষ করের কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। আমরা প্রস্তাব করছি দরিদ্র, অতি দরিদ্রদের আগামী কয়েক বছরে নেটের বাইরে রাখার।’
রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে আবুল বারকাত বলেন, ‘আমাদের বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। যা প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটের ৯২ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয়ের ৭৭ শতাংশ আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে, বাকিটা পরোক্ষ কর। যেখানে প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র ৪৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ৭ শতাংশ, যা সরকারের চলতি বাজেটে ঘাটতি তুলনায় অনেক কম। বাজেট ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ কিংবা দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণের প্রয়োজন নেই। সমস্যাটা অর্থনৈতিক হলেও সমাধান তার রাজনৈতিক।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম