Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাদকের টাকা জোগাতে ছিনতাই, রাজশাহীতে আতঙ্ক ‘ছোঁ মারা পার্টি’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ মে ২০২২ ২০:২৯

মোটরসাইকেল নিয়ে ছিনতাই করেছেন ওয়াদুদ বুলবুল

রাজশাহী: মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকা নিউমাকের্ট। শুক্রবার (২০ মে) দুপুর হওয়ায় জনশূন্য ছিল রাস্তাটি। ইফফাত আরা রিতা নামের এক নারী রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই রাস্তার একটি সুপারশপে। পথে বাইকে করে এক তরুণ তার ভ্যানিটি ব্যাগ ছোঁ মেরে নিয়ে চলে যান। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে ধরতে পারেননি। পরে তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন।

ইফফাত আরা রিতার অভিযোগে শনিবার (২২ মে) রাতে নগরীর নওদাপাড়া এলাকার একটি বিলাসবহুল বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ছিনতাইকারীকে। ছিনতাইকারী একটি ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেনটিভ। গ্রেফতার ওই ছিনতাইকারীর নাম ওয়াদুদ বুলবুল (৩৬)। তার বাবা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ছিলেন। বাবার রেখে যাওয়া চার তলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাটেই বাস করেন তিনি। নেশার টাকা জোগাড় করতেই তিনি ছিনতাই করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশকে।

বিজ্ঞাপন

ইফফাত আরা রিতাই কেবল নয়, এই ‘ছোঁ মারা পার্টি’র আতঙ্কে দিন কাটছে রাজশাহীর নগরবাসীর। দিনে-রাতে জনবহুল রাস্তায় প্রায় প্রতিদিনই নগরীতে এমন ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ইদুল ফিতরের পর ছিনতাই বেড়ে গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, কারাগারে থাকা কিছু ছিনতাইকারী ইদের আগে জামিন পেয়েছেন। তারা আবার ছিনতাই শুরু করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া মাদকাসক্ত কিছু তরুণ আছেন, যারা মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ছিনতাইকারীরা দুইভাবে ছিনতাই করে থাকেন। এদের একটি অংশ মোটরসাইকেল নিয়ে পথচারী বা রিকশাযাত্রীদের কাছে ছোঁ মেরে ব্যাগ-মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এদের টার্গেট থাকে নারীরা। ছিনতাইকারীদের আরেকটি অংশ রাত-বিরাতে বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিতে অবস্থান নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করছেন। তবে জিম্মি করে ছিনতাই করা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। যারা ছিনতাইয়ে জড়িত হয়ে পড়ছেন, তাদের একটি বড় অংশই মাদকের টাকা জোগাতেই এ কাজ করছেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার ওয়াদুদ বুলবুল

ইফফাত আরা রিতার ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার বুলবুল পুলিশকে বলেন, চার মাস আগে বন্ধুদের সঙ্গে থেকে ফেনসিডিল ও ইয়াবা খেয়েছিলেন তিনি। এরপর আসক্ত হয়ে যান। হাতে টাকা থাকলে তিনি ফেনসিডিল সেবন করেন। এক বোতল ফেনসিডিলের দাম দুই হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতিদিন তার অন্তত ছয়টি ইয়াবা ট্যাবলেট লাগে। প্রতিটির দাম ২৫০ টাকা। নেশার টাকা জোগাড় করতেই তাকে ছিনতাই করতে হচ্ছে।

বুলবুল আরও জানান, এর আগেও তিনি এভাবে ছিনতাই করেছেন। ছিনতাই হওয়া মোবাইল ব্যবহার করলে কিংবা বিক্রি করলেও তার ধরা পড়ার ভয় আছে। তাই ছিনতাই করা মোবাইল তিনি ড্রেনে ফেলে দেন। ইফফাত জাহানের মোবাইলটিও ফেলেছেন ড্রেনে।

গত ৮ মে সন্ধ্যার পর নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকাতেও এমন ‘ছোঁ মারা পার্টি’র শিকার হন এক নারী। হেঁটে যাওয়া অবস্থায় এক ছিনতাইকারী বাইক নিয়ে এসে জনবহুল ওই স্থানেই সেই নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছোঁ মারেন।  সময় স্থানীয়রা ধরে তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ তার মোটরসাইকেলটিও জব্দ করে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছিনতাইকারীর নাম ফায়সাল রহমান (৩৬)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় তার বাড়ি। বিবিএ’র শিক্ষার্থী ফায়সালের মা একজন স্কুলশিক্ষক। বাবা শিক্ষা কর্মকর্তা। মাদকের টাকা জোগাড়ে ফায়সাল রাজশাহী এসেছিলেন ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। ধরা পড়ার আগে একই দিনে ফায়সাল আরও তিনটি ছিনতাই করেন। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৩০০ টাকা ও কয়েকটি মোবাইল ফোন পান। জিরো পয়েন্টে ধরা পড়ার সময় এসব তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন মামলা করে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মজিবর রহমান গত ১০ মে জিপিও থেকে স্থায়ী আমানতের ২৩ লাখ টাকা তোলেন। তারপর টাকার ব্যাগ নিয়ে নগরীর বাটার মোড়ে জুতার শোরুমে ঢুকে জুতা পছন্দ করছিলেন। পাশে ব্যাগটি রেখে মজিবর রহমান ও তার স্ত্রী জুতা দেখছিলেন। তখনই এক ছিনতাইকারী তার ব্যাগটি ছোঁ মেরে নিয়ে দৌড় দেন। বিক্রয়কর্মী তাকে ধাওয়া দিয়েও ধরতে পারেননি। পরে এ নিয়ে ওই শিক্ষক থানায় অভিযোগ করেন। এরপর গত ১১ মে এক ছিনতাইকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে তিনি টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেননি।

পুলিশ বলছে, মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য মাদকসেবীরা এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। শহরে নতুন ছিনতাইকারী কম। ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিরা বারবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। এজন্য তাদের ধরে জেলে ঢোকানো হয়। এবার ইদ নির্বিঘ্ন করতে ঈদের আগেও এ ধরনের অভিযান জোরদার ছিল। তখন বেশকিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে ইদের আগে ও পরে আবার কিছু ছিনতাইকারী আদালত থেকে জামিন পেয়ে বের হয়েছেন। তারা এখন ছিনতাই করছেন। তাদের খুঁজে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, রাজশাহী নগরীতে যারা ছিনতাই করেন, তারা চিহ্নিত। এছাড়াও নগরীর বাইরে থেকে বা অন্য জেলা থেকেও এই শহরে আসছে ছিনতাই করার জন্য। তাদেরও গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া এই ছিনতাইয়ের যুক্ত হচ্ছে কিছু ধনীর দুলাল। তারা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। মূলত তারা মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই ছিনতাইয়ে নামছে। এদের আইনের আওতায় এনে শহরে ছিনতাই কমানোর চেষ্টা চলছে।

সারাবাংলা/টিআর

ছিনতাই ছোঁ মারা পার্টি টপ নিউজ মাদকের টাকা জোগাতে ছিনতাই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর