Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলায় বৈশ্বিক চুক্তির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ মে ২০২২ ২৩:৫৯

ঢাকা: ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলায় যেন সবাই একজোট হয়ে ন্যায়সঙ্গত সাড়া দিতে পারে, সে কারণে একটি ‘মহামারি চুক্তি’তে পৌঁছার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ মহামারিগুলো মেকাবিলার লক্ষ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত সাড়া প্রদানের জন্য আমাদের অবশ্যই মহামারি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করতে হবে।

রোববার (২২ মে) ৭৫তম বিশ্ব স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলি’র উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ২২ মে শুরু হয়েছে এই অ্যাসেম্বলি, চলবে ২৮ মে পর্যন্ত। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর এই প্রথম শারীরিক উপস্থিতিতে কোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সমাবেশে ভিডিওবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, লাখ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রচেষ্টার বাইরে রেখে টেকসইভাবে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তাই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান শেয়ার করা দরকার।

বাংলাদেশ সরকার জাতীয় বাজেট থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দান করার জন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার শতভাগেরও বেশি লোককে এরই মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের জনগণকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এখনো সারাবিশ্বে জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। তবে বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে মহামারির হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা আমাদের জিডিপির প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আমরা প্রায় চার কোটি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নগদ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছি।

বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয় শিবিরেও মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে— এ কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনা মোকাবিলায় যারা সহায়তা করেছে, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের ফ্রন্টলাইন পরিসেবাদাতাদের নিবেদিত কাজের জন্য কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ ওষুধ, পিপিই ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের পাঠিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী গণসামগ্রী হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।

স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলিতে রোগ-বালাইয়ের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগসহ চিকিৎসা গবেষণায় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগের বিস্তারের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে।

ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের বিষয়ে গবেষণা ও চিকিৎসার লাভের সুবিধার জন্য সবাইকে আরও বিনিয়োগ করতে হবে বলে অভিমত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জরুরি সাড়াদানের অংশ হিসাবে সমাধান করা উচিত। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা, ডুবে মারা যাওয়া এবং অন্যান্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধেও আন্তর্জাতিক সহায়তা চাই।

প্রথাগত ওষুধের গবেষণা ও মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভারত সরকার ও ডব্লিউএইচও-কে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব বয়সের মানুষের জন্য সুস্থ জীবনযাপনের লক্ষ্যে এসডিজি-৩ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ১৮ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে আমাদের জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সক্রিয়ভাবে শিশু পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে এবং ২০০৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে স্টান্টিং ও অপচয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য— ২০২২ সালের শেষ নাগাদ দক্ষ ধাত্রীদের দ্বারা ৬৫ শতাংশ প্রসব এবং ২০২২ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রসবপূর্ব-সেবা নিশ্চিত করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য শাসনের ক্ষেত্রে ডব্লিউএইচও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই ডব্লিওএইচওকে টেকসই অর্থায়ন করতে হবে এবং একে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সহায়তা দিতে সক্ষম করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ও কূটনীতির জন্য আমাদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভূমিকা পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ছাড়াও কেনিয়া, বতসোয়ানা ও ক্রোয়াশিয়া প্রেসিডেন্ট, ইকুয়েডরের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘ মহাসচিব এসময় বক্তৃতা করেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

৭৫তম স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলি টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর