Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপির দিকে ঝুঁকছেন কি জি এম কাদের?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ মে ২০২২ ২৩:৫৫

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো প্রায় দুই বছর। তবে এরই মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলাপ-আলোচনায় সরগরম রাজনৈতিক অঙ্গন। ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলই নিজ নিজ শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে ঘর গোছানোর কাজে ব্যাস্ত। জাতীয় পার্টিও বসে নেই। তারাও নিজেদের মতো করে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে। তবে সে কাজে খুব একটা গতি নেই।

জাতীয় সংসদের এই বিরোধী দলটি গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ৩০০ প্রার্থী দিয়ে অংশগ্রহণের কথা বলে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এককভাবে সব আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিস্থিতিতে তারা নেই। দলের নেতাকর্মীরাই বলছেন, তাদের ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের অবস্থানই নড়বড়ে। ৩০০ আসনে মোটামুটি যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। এ পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচন করতে হবে তাদের।

বিজ্ঞাপন

দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যে দলটি জাতীয় পার্টিকে বেশি আসন দেবে, সেই দলের সঙ্গেই তারা নির্বাচনি জোট করবে। তবে বর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) অনেকটাই বিএনপির দিকে ঝুঁকে রয়েছেন বলে মনে করছেন তারা।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বলছেন, একক নির্বাচন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি নেই দলটির। দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের অবস্থা নড়বড়ে। নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে নির্বাচনে জিতে আসা তাদের পক্ষে কঠিন। দলের চেয়ারম্যান খোদ জি এম কাদেরের নিজের আসনের অবস্থাও নড়বড়ে। ফলে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আওয়াজ দিলেও শেষ পর্যন্ত জোট হয়েই নির্বাচনে যেতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বলে আসছেন, তারা আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে নেই। তবে মহাজোটের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি কোনো পক্ষ থেকেই। জি এম কাদের নিজেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এমন বক্তব্যই রেখে আসছেন। সম্প্রতি তিনি সরকারের সমালোচনা করেও বক্তব্য দিচ্ছেন। সরকারকে কর্তৃত্ববাদী আখ্যা দিয়ে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, দলের কেউ ‘সরকারের দালালি’ করলে পস্তাতে হবে।

দলের নেতাকর্মীদের অবশ্য অভিমত, ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া জাতীয় পার্টি প্রধানের মুখ থেকে এমন সব বক্তব্য ভিন্ন ইঙ্গিত দেয়। জি এম কাদের মহাজোট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়তে চান বলেই এমন বক্তব্য রাখছেন। গত রমজানে জাপা আয়োজিত ইফতারে দলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোও ছিল সেই কৌশলেরই অংশ। যদিও বিএনপি শেষ পর্যন্ত সেই ইফতারে অংশ নেয়নি।

জাপা সূত্র বলছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জি এম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এরই মধ্যে তারা বিভিন্ন স্থানে সবার অগোচরেই বৈঠক করেছেন। ফোনালাপ চলছে নিয়মিতই। দলীয় ফোরামেও অনেকের সঙ্গে জি এম কাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামার প্রত্যয় জানিয়েছেন। সবকিছুর মধ্যেই জি এম কাদেরের বিএনপিমুখী প্রবণতা দেখতে পাচ্ছেন এসব সূত্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, রাজনৈতিক খেলা এখনো জমে ওঠেনি। তবে নির্বাচন সামনে রেখে শিগগিরই রাজনীতির মাঠ জমে উঠবে। এখনো সুস্পষ্ট না হলেও জাপা চেয়ারম্যানের গতিবিধি বিএনপির দিকে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। দেশে ফেরার পর তার অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট হবে।

জি এম কাদের বিএনপিমুখী হলেও কতটা সফল হতে পারবেন, তা নিয়েও অবশ্য সংশয় রয়েছে এই জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্যের। তিনি বলছেন, রাজনীতির খেলায় জি এম কাদের কতটুকু সফল হবেন, তা বোঝা মুশকিল। কারণ রওশন এরশাদ সুস্থ হয়ে ফিরলে জাপাকেন্দ্রিক সব সমীকরণ নতুন করে গড়তে হবে।

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আমরা তাই ঘর গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে এককভাবে নির্বাচন করাই আমাদের লক্ষ্য। তাছাড়া সামনে বাজেট অধিবেশন রয়েছে। সংসদে আমরা সত্য কথা বলব। পরিবেশ-পরিস্থিতি বাধ্য করলে অধিবেশন থেকে ওয়াকআউটও করা হতে পারে।

নির্বাচনি জোট করতে বিএনপির সঙ্গে যাবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে নেতিবাচক উত্তর দেন মুজিবুল হক চুন্নু। বলেন, ‘আমরা কারও কাছে যাব না। বিএনপির কাছে কেন যাব? কোনোদিনই যাব না। আমাদের কাছে অন্যদের আসতে হবে। প্রয়োজনে বিএনপি আসবে আমাদের কাছে।’ বিএনপি এলে কি জোট হবে— এমন প্রশ্নের অবশ্য কোনো উত্তর দেননি তিনি।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

জাতীয় পার্টি জি এম কাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনি জোট বিএনপির সঙ্গে ঐক্য মহাজোট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর