বাগদা ফার্মের সাঁওতালদের উচ্ছেদ না করতে ৪০ নাগরিকের বিবৃতি
২৪ মে ২০২২ ১৫:১২
ঢাকা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ (বাগদা) ফার্মের জমি থেকে ইপিজেড স্থাপনের উদ্দেশে স্থানীয় সাঁওতালদের উচ্ছেদ না করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক।
মঙ্গলবার (২৪ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী, সমাজকর্মী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলাসহ অনেকে।
‘বাগদা ফার্মের সাঁওতালদের উচ্ছেদের চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন’ শিরোনামের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১০ মে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে বাগদা ফার্মে ইপিজেড স্থাপনসংক্রান্ত সভায় স্থানীয় সাঁওতালদের আমন্ত্রণ জানিয়েও তাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। এরপরই তারা বিক্ষোভ করেন এবং বাগদা ফার্মে শিল্প স্থাপন না করে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
সাঁওতালদের দাবির সঙ্গে সহমত জানিয়ে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং অন্যান্য সূত্র থেকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আমরা জানতে পেরেছি যে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ (বাগদা) ফার্মের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১০ মে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বেপজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সাংসদ, গাইবান্ধার এসপি, গোবিন্দগঞ্জের মেয়রসহ বাগদা ফার্মের সাঁওতাল নেতাদের সাথে একটি সভায় মিলিত হয়েছিলেন। অথচ সাঁওতাল নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েও ওই সভায় তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।’
এর প্রতিবাদে স্থানীয় আদিবাসী সাঁওতালরা বিক্ষোভও করেছেন। তাদের দাবি, ‘চিনিকলের জন্য আখ চাষ করা ছাড়া অন্য কিছু করা হবে না এই শর্তে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এসব জমি রিকুইজিশন করেছিল। চিনিকল ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ থাকায় সে শর্ত ভঙ্গ হয়েছে, তাই জমিগুলো তাদের কাছে ফেরত দিতে হবে, ইপিজেড নির্মাণের প্রশ্নই ওঠে না।’
‘আমরা মনে করি তাদের এ দাবি যুক্তিসঙ্গত এবং কোনো অবস্থায়ই তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপন করা কিংবা শিল্প কারখানা করা যাবে না মর্মে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও আছে। স্থানীয় সাঁওতালদের দাবি রিকুইজিশন করা ১৮৪২ একর জমির সঙ্গে তাদের আরও প্রায় ৬০০ একর জমি ফার্মের নামে অবৈধভাবে কুক্ষিগত করা হয়েছে। সুগার মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বাগদা ফার্ম এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়, এবং উচ্ছেদের নামে তাদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে ৩ জন আদিবাসী সাঁওতাল নিহত হন।’
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন, তারা হলেন—
১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
২. পংকজ ভট্টাচার্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সামাজিক আন্দোলন নেতা
৩. ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী
৪. আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব
৫. ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
৬. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি
৭. আনু মোহম্মদ- শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৮. অ্যাড. জেড আই খান পান্না, সভাপতি, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সদস্য
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল
৯. ড. আবুল বারকাত, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি
সমিতি
১০. ড. ইফতেখারুজ্জামান- নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
১১. শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
১২. শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ
১৩. অ্যাড. রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা
১৪. ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, রীব
১৫. রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
১৬. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৭. কাজল দেবনাথ, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ
১৮. অ্যাড. তবারক হোসেইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও সিনিয়র
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৯. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী
২০. রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক
২১. ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যন্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়
২২. শারমিন মোর্শেদ, নির্বাহী পরিচালক, ব্রতি
২৩. ড. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৪. ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৫. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৬. তাসনিম সিরাজ মাহবুব, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৭. সামিনা লুৎফা, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৮. সঞ্জীব দ্রং, সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২৯. নুর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী
৩০. ড. জোবায়দা নাসরিন- অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩১. ড. মোহম্মদ তানজিবউদ্দিন খান, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩২. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
৩৩. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
৩৪. রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক ও অধিকারকর্মী
৩৫. হানা শামস আহমেদ- মানবাধিকার ও আদিবাসী অধিকার কর্মী
৩৬. দীপায়ন খীসা, প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
৩৭. অরূপ রাহী, সাংস্কৃতিক কর্মী
৩৮. নোভা আহমেদ, গবেষক ও শিক্ষক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯. পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন
৪০. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
বিশিষ্ট নাগরিকেরা, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে এ ধরণের জনবিরোধী, উসকানিমূলক ও হঠকারি উচ্ছেদ পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানান।
সারাবাংলা/আরএফ/এমও