প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে আসছে রেলের নিজ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান
২৪ মে ২০২২ ২৩:১১
ঢাকা: ২০১৮ সালে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া সরাসরি ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক নিয়োগ দিতেই চলে যায় তিন বছর। একই ঘটনা দেখা গেছে খুলনা-দর্শনা ডাবল রেলপথ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। শুধু এই একটি কিংবা দু’টি প্রকল্পই নয়, রেলওয়েতে এমন ঘটনা প্রায় প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। এতে প্রচুর সময় নষ্টের কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। এবার এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে এসে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতোমধ্যে ‘বিআর কনসালটেন্সি কোম্পানি’ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তৈরির খসড়া প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক সার্ভিসেস (রাইটস) এবং বাংলাদেশের আইআইএফসি’র গঠন ও কার্যাবলী পর্যালোচনা করে ‘রাইটস’র আদলেই রেলের জন্য যুগোপযোগী একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি মূলত রেলের পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং (পিএসইউ) হিসেবে গঠনের চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘বিআর কনসালটেন্সি কোম্পানি’ গঠনের খসড়া প্রস্তাবে একজন চেয়ারম্যানসহ পাঁচ থেকে ২০ জন পর্যন্ত সদস্য নিয়ে একটি বোর্ড অব ডিরেক্টর থাকবে। এছাড়া কি ম্যানেজমেন্ট পারসোনাল হিসেবে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পাঁচ জনের একটি দল থাকবে। জানা গেছে, খসরা প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে খসড়া প্রস্তাবটির পর্যালোচনা চলছে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিষয়টি রিভিউ করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ার মূল কারণ সময় মতো পরামর্শক নিয়োগ দিতে না পারা। যথা সময়ে পরামর্শক দিতে না পারায় প্রকল্প ঝুলে যায়, ব্যয় বাড়ে। এতে রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট হয়। আমরা মূলত রেলের উন্নয়ন কার্যক্রমকে তরান্বিত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘দরপত্রের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়ন শুরু করতেই প্রচুর সময় লেগে যায়।’ রেলের নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থাকলে সরাসরি প্রকল্প যাচাইয়ের কাজ শেষ করা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, গত একশ’ বছরে দেশটির রেল পরিষেবা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। রেলের উন্নয়নে ভারত ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক সার্ভিসেস (রাইটস)। প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে রাইটসের কার্যক্রম শুধু ভারতীয় রেলওয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ৫৫টি দেশে তাদের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে কনসালটেন্সি সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। রাইটসকে বলা হয় ভারতের মিনি রত্ন প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু পরামর্শক প্রতিষ্ঠানই নয়, ভারতের রেলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বাইরেও নানামুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মোট ১৭টি পিএসইউ রয়েছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘ভারতের রাইটসের এই সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।’ এই উদ্যোগ সফল হলে পর্যায়ক্রমে পর্যটন, শিক্ষা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে একই ধরনের কার্যক্রম সম্প্রসারণের চিন্তা রয়েছে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন লোকোমোটিভ কেনার পাশাপাশি রেলকে ঢেলে সাজাতে ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ২৬টি প্রকল্প একবার করে সংশোধন করতে হয়েছে। এছাড়া কিছু প্রকল্প ১০ বছর আগে নেওয়া হলেও এখনও শেষ হয়নি। এতে বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়।
উল্লেখ্য, ১৮৬২ সালে বর্তমানের দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার লাইন স্থাপনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠনে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি রেলওয়েকে গুরুত্ব দিয়ে নানা উদ্যোগ নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে হত্যার পর রেল অনেকটা অবহেলিত হয়ে পড়লেও বর্তমান সরকার রেলওয়েকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- সারাদেশে সিঙ্গেল রেললাইনকে ডাবল লাইনে রূপান্তর করা, ব্রডগেজকে উন্নত করার পাশাপাশি নতুন লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া (বর্তমানে এগুলো চলমান)।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম
দীর্ঘসূত্রিতা নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাংলাদেশ রেলওয়ে