অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যু: সিংগাইরের সিটি হাসপাতাল সিলগালা
২৫ মে ২০২২ ১৭:২৩
মানিকগঞ্জ: প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ৯ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৫ মে) দুপুরের দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপন দেবনাথের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মা লাবিয়া অর্ণব বেসরকারি হাসপাতালটি সিলগালা করে এর সঙ্গে যুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
হাসপাতালটির সিকিউরিটি গার্ড হামিদুর রহমান ও আব্দুল করিমকে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালের মার্কেটিং বিভাগের পারভীন আক্তার, ফাতেমা আক্তার, সুমি আক্তার ও শিল্পী আক্তার এবং হাসপাতালের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপনের স্ত্রী মান্না তানিয়াকে ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মা লাবিয়া অর্ণব বলেন, সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে এর কোনো সরকারি নিবন্ধন পাওয়া যায়নি। একজন চিকিৎসক ও পাঁচ জন নার্স হাসপাতালটিতে কাজ করছেন। অভিযান চলাকালে মালিক নজরুল ইসলাম পালিয়ে যান। হাসপাতালে যুক্ত ৯ জনকে কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারের পাঠানো হচ্ছে। অনুমোদন না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, সিংগাইরের সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোববার অস্ত্রোপচারের সময় উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের টাকিমারা গ্রামের মুখলেছ মিয়ার স্ত্রী সাবিনা নামে এক প্রসূতি মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. ফারহানা নবিকে প্রধান করে এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ডা. ফারহানা নবি বলেন, এরই মধ্যে আমরা তদন্তের কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তে সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপনের কাছে তার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। তিনি দেখাতে পারেননি। সরকারি কাগজে-কলমে সিংগাইরে সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে কোনো হাসপাতাল নেই। যিনি প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেছেন, তিনিও কোনো ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নন। এমনকি যে চিকিৎসক প্রসূতিকে অজ্ঞান করেছেন, তারও কোনো ডিগ্রি নাই।
ওই প্রসূতি সাবিনা আক্তারের প্রসব বেদনা উঠলে গত শনিবার রাত ১১টার দিকে তাকে সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। দিবাগত রাত ৩টার দিকে তার অস্ত্রোপচার করেন গাইনি চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ইমা বিনতে ইউনুছ। অস্ত্রোপচারে এক মেয়ে সন্তানের জন্ম দিলেও প্রসূতিকে বাঁচানো যায়নি। পরিবারের অভিযোগ, ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে মাত্রারিক্ত রক্তক্ষরণে অপারেশন থিয়েটারেই তার মৃত্যু হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে মৃত অবস্থায় সাবিনাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে, ওই প্রসূতির মৃত্যুর পর থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপস-মীমাংসার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করে। এ নিয়ে প্রসূতির স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে দফায় দেনদরবার হয়। এক পর্যায়ে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। তবে ওই প্রসূতির এক স্বজন জানিয়েছেন, প্রসূতির মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মধ্যে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা হলে সমঝোতার বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।
সারাবাংলা/টিআর
৯ জনের কারাদণ্ড প্রসূতির মৃত্যু সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতাল সিলগালা