চলন্ত বাসে ধর্ষণচেষ্টা: চালক ও সহকারী গ্রেফতার
২৬ মে ২০২২ ১৫:৪৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে চলন্ত বাসে পোশাক কর্মী তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে বাসের চালক ও সহকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বাসটিও জব্দ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বাস শনাক্তের পর চালক ও সহকারীকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে ধর্ষণের চেষ্টার সময় বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত তরুণী হাসপাতাল ছাড়লেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বিভীষিকাময় এই ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
বুধবার (২৫ মে) রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ থেকে বাসচালক এবং নগরীর সিএন্ডবি এলাকা থেকে সহকারীকে গ্রেফতার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার আনোয়ার হোসেন টিপু (২৪) এবং সহকারী জনি দাশ (১৮) উভয়ের বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার সিএন্ডবি এলাকায়।
আক্রান্ত ২০ বছর বয়সী তরুণী নগরীর কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত আছেন। নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ের আগে চান্দগাঁও এলাকায় তার বাসা।
গত ১৯ মে রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে ওই তরুণীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। জানতে পেরে পুলিশ তরুণী কিভাবে আহত হলেন- এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। তবে পাঁচদিন ধরে সংজ্ঞাহীন ছিলেন ওই তরুণী। মঙ্গলবার (২৪ মে) তার জ্ঞান ফেরে। বুধবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এরপর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত কারখানার বাসে তরুণী প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন। ১৯ মে রাত ৯টার দিকে কারখানা ছুটি হয়। তিনি বাসায় ফেরার জন্য একই কারখানার আরও ১০-১২ জন শ্রমিকদের সঙ্গে বাসে ওঠেন। বাস বহদ্দারহাট এলাকায় পৌঁছার পর অন্য শ্রমিকরা দ্রুত নেমে যান। পেছনের আসন থেকে এগিয়ে নামার সময় তাকে নিয়ে বাস দ্রুত রাহাত্তার পুলের দিকে এগিয়ে যায়।
বাসের চালকের আসনে ছিলেন সহকারী। আর চালক দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাস যখন বহদ্দারহাট থেকে রাহাত্তার পুলের দিকে যেতে থাকে, তখন চালক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নিচে পড়েন জ্ঞান হারান তরুণী।
বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর ওই তরুণী নগরীর বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর টানা ছয় ঘণ্টার অভিযানে পুলিশ চালক ও সহকারীকে আটকের পাশাপাশি বাস জব্দ করে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘তরুণীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা রাহাত্তার পুল এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজ থেকে বাসটি শনাক্ত করা হয়। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, বাসটি ভাড়ায় নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আনা-নেওয়া করত। বাস শনাক্তের পর চালক ও সহকারীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য আমরা সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতার করি। সিএন্ডবি এলাকা থেকে বাসটি জব্দ করা হয়েছে।’
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওই তরুণী এখন নিজের বাসায় অবস্থান করছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই তরুণী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাস যখন বহদ্দারহাট মোড়ে আসে, অন্যরা নেমে যায়। আমি নামতে গেলে বাস দ্রুত রাহাত্তার পুলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আমি চিৎকার করে তাদের থামাতে বলি। তখন একজন বাসের জানালা বন্ধ করতে থাকে। আমি ভয় পেয়ে যাই। সে এসে আমাকে টেনে বাসের পেছন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলে আমি ঘুষি মেরে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিই।’
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ