মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ
২৬ মে ২০২২ ১৮:১২
ঢাকা: কামরাঙ্গীরচরের ঝাউলাহাটি, নয়াগাঁও, হযরত নগর, ঝাউচর এলাকার কিলোমিটার মাটি খুঁড়তেই একের পর এক উঠে আসে অবৈধ গ্যাস সংযোগের পাইপ। এসব সংযোগ নেওয়া হয়েছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক, এমনকি শিল্প কারখানাতেও। আর সেসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গত ১৫ দিন ধরে কামরাঙ্গীরচরে অভিযান পরিচালনা করছে তিতাস।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিতাসের বৈধ সংযোগের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুন বেশি অবৈধ সংযোগের খোঁজ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি অর্ধ কোটি টাকার বেশি রয়েছে বকেয়া বিল।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৬ মে) কামরাঙ্গীর চর এলাকার ঝাউলাহাটি, নয়াগাঁও, হযরত নগর এলাকার ছয়টি স্পটে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ১ হাজার ৩৫০টি বাড়ির প্রায় ৫ হাজার ৪০০টি চুলার সংযোগ এবং দুইটি বাণিজ্যিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তারা অবৈধ গ্যাস লাইনের বিরুদ্ধে অভিযানে সহযোগিতা করতে তিতাসের গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে, কামরাঙ্গীরচরের যেসব এলাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরে অভিযান চালানো হয়েছে, সেসব এলাকায় লাইন বিচ্ছিন্ন থাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার ঝাউচর এলাকার বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার মোবাইল ফোনে বলেন, আমরা তো ভাড়াটিয়া। বাড়ির মালিক গ্যাস লাইন বৈধভাবে নিয়েছেন নাকি অবৈধভাবে নিয়েছেন, সেটি তো আমাদের জানার কথা না। আমার বাসায় চার দিন ধরে গ্যাস নেই। অন্য এলাকায় কারও বাসায় ১০ দিন, কারও বাসায় ১৫ দিন ধরে গ্যাস নেই। বাড়িওয়ালার কাছে জানতে চেয়েছি, কবে গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাবে। তিনি জানিয়েছেন, এখানকার কাজ শেষ হলে নাকি পাওয়া যাবে।
মাহমুদা আক্তার বলেন, গ্যাস না থাকায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। শহরের বাসাবাড়িতে তো কাঠের চুলার ব্যবস্থা থাকে না। প্রথম দুই দিন হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে বাধ্য হয়েছি।
একই এলাকার নাজনীন আক্তার বলেন, ছোট থেকে শহরে বেড়ে উঠেছি। কোনোদিন কাঠ দিয়ে রান্নার চেষ্টাও করিনি। তার দরকারই পড়েনি। এখন ছাদে ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে কাঠ জ্বালিয়ে কোনোরকমে রান্না করে দিন যাচ্ছে।
আশ্রাফাবাদ এলাকার একটি বাড়ির মালিক মোমিনুর রহমান বলেন, আমরাও চাই অবৈধ সংযোগ না থাকুক। কিন্তু এই উদ্যোগের কারণে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এর বিকল্প ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল।
জানতে চাইলে স্থানীয় ওর্য়াড কাউন্সিলর মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। তারা এই এলাকায় সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার পর্যন্ত গ্যাসের সংযোগ বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন। তারা গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরাও চাই, অবৈধ সংযোগ না থাকুক। কিন্তু মানুষের তো দুর্ভোগ বেড়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, কামরাঙ্গীর চরে তিতাসের মোট বৈধ গ্রাহকের সংখ্যা ১২ হাজারের মতো। কিন্তু অবৈধ সংযোগের সংখ্যা এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি। সুনির্দিষ্টভাবে না বলতে পারলেও তিতাস কর্মকর্তারা বলছেন, সেই সংখ্যা লক্ষাধিক। পাশাপাশি গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে ৬৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কামরাঙ্গীরচরের মতো এত বেশি অবৈধ সংযোগ রাজধানীতে আর কোথাও দেখা যায়নি। কয়েক হাত মাটি খুঁড়লেই যেসব সংযোগ পাচ্ছি, তার অধিকাংশই অবৈধ।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করব। তারপর নতুন করে গ্যাসের সংযোগ দেবো। এই অভিযানের ফলে এই এলাকার বকেয়া গ্যাস বিল আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে, গত ১০ মে থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান শুরু করে তিতাস। ওই সময় থেকেই গোটা এলাকায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর