সম্মেলনের আগে নেতাদের মধ্যে ‘বোঝাপড়া’ তৈরির চেষ্টায় নওফেল
২৮ মে ২০২২ ২২:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচ শীর্ষ নেতার সঙ্গে একইদিনে পৃথক চার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এসব কর্মসূচি দলটির অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগেই শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক ‘সুন্দর বোঝাপড়া’ তৈরি করে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরিবেশ পাল্টাতে চান নওফেল, এমন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে।
পাঁচ নেতা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ‘রেষারেষির’ ইতিহাস পুরনো। এর ব্যতিক্রম নেই বর্তমানের নেতাদের মধ্যেও। মাহতাব-নাছির একই মেরুতে থেকে নিজেদের বলয় নিয়ে সক্রিয় আছেন। সুজনের সঙ্গে এক সময় নাছিরের ‘ভালো সম্পর্ক’ থাকলেও গত দেড় বছরে এর দৃশ্যত অবনতি ঘটেছে। সুজন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর বিদায়ী মেয়র নাছিরের আমলের নানা অনিয়ম নিয়ে সোচ্চার হন। এতে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ‘পারতপক্ষে’ মাহতাব-নাছিরের নেতৃত্বাধীন নগর আওয়ামী লীগের কোনো কমসূচিতে যান না রেজাউল। সুজনের সঙ্গেও মেয়রের দূরত্ব আছে, যা মেটাতে বছরখানেক আগে দূতিয়ালের ভূমিকা নিতে হয়েছিল নওফেলকে। আবার আওয়ামী লীগের ‘উড়ে এসে’ সংসদ সদস্য হয়ে যাওয়া এম এ লতিফের সঙ্গে একই আসনের সংসদ সদস্য পদের দাবিদার সুজনের সম্পর্ক এখনও ‘সহজ নয়’। প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া লতিফের সঙ্গে এক সময় নাছিরের দহরম-মহরম দেখা গেলেও সম্প্রতি দু’জনের অবস্থান দুই মেরুতে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সতর্কভাবে শীর্ষ নেতাদের এই রেষারেষির রাজনীতি এতদিন এড়িয়ে চলতেন। তবে সম্মেলনকে সামনে রেখে তিনি এখন যাচ্ছেন সেসব নেতাদের সঙ্গে। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় দূরত্ব কমিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি সম্মেলন আয়োজনে কাজ করার ইচ্ছার কথা নেতাদের জানিয়ে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (২৮ মে) সকালে নগরীর কে বি আমান আলী রোডে মজিদিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা হেফজখানা ও ইয়াতিমখানায় কৃতি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন নওফেল। একই কর্মসূচিতে ছিলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও।
দুপুরে নগরীর চন্দনপুরায় দারুল উলুম কামিল মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের আমন্ত্রণে সেখানে যান। ওই মাদরাসার পরিচালনা পরিষদের সদস্য এবং শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি অংশ নেন।
বিকেলে নগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় সদরঘাট থানা শ্রমিক লীগের উদ্যোগে শ্রমিক নেতা কাজী মাহবুবুল হক এটলীর স্মরণ সভায় যোগ দেন নওফেল। সেখানে অতিথি হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফও।
সন্ধ্যায় নওফেল সদরঘাট থানা আওয়ামী লীগের ইদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আজ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে।
জানতে চাইলে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন সম্পন্ন করতে হবে। এই মুহূর্তে সবাইকে মিলেমিশে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। আমাদের নেতৃত্বের মধ্যে প্রতিযোগিতা অবশ্যই থাকবে, কিন্তু আমাদের চট্টগ্রামের রাজনীতির ঐতিহ্য অনুযায়ী, আমরা যাতে সবাই মিলেমিশে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে একটি সুন্দর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বেগবান করতে পারি, সেই প্রত্যাশা আমাদের সবার মধ্যে আছে। প্রতিযোগিতার মধ্যেও সবার পথচলা যাতে একইসাথে হয় দলের স্বার্থে, সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া বিএনপি আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মানেই তো পেট্রোল বোমা-আগুন সন্ত্রাস। আগামী দিনে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা মোকাবিলার জন্য সাংগঠনিক শক্তি অক্ষুন্ন রাখতে হবে। এ অবস্থায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই বলে আমি মনে করি।’
উল্লেখ্য, গত ২৫ মে চট্টগ্রামে এক সাংগঠনিক সভায় এসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আগামী ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সম্মেলনের ঘোষণা দেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম
টপ নিউজ বোঝাপড়া মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী সম্মেলন