Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেঘনায় দেখা নেই ইলিশের, ঘোলা পানিকে দুষছেন জেলেরা

গোলাম সামদানী, চাঁদপুর থেকে ফিরে
২৮ মে ২০২২ ২২:২৯

ঢাকা: চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। সাধারণত মার্চ ও এপ্রিলের নিষেধাজ্ঞার পর মে মাসের শুরু থেকে নদীতে মাছ ধরতে নামেন জেলেরা। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পর মাছ ধরার উচ্ছ্বাস নিয়ে নদীতে নামলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা। জাল ফেলে ইলিশ না পেয়ে বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়েছেন মেঘনা পাড়ের জেলেরা। দিনের পর দিন লোকসান হওয়ায় আপাতত মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন অধিকাংশ জেলা।

এদিকে, নদীতে ইলিশ না পাওয়ার জন্য জেলে ও মৎস্য বিজ্ঞানীরা বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে নদীর পানি ঘোলা হওয়ার কারণকে দুষছেন। তাদের মতে, সিলেটে বন্যার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানি মেঘনার পানিকে ঘোলা করে ফেলছে। এতে ইলিশ সাগরে চলে গেছে। ফলে নদীতে এখন কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পানি পরিষ্কার হলেই আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) গবেষণা জাহাজে করে গত (২৬ মে) বৃহস্পতিবার দিনভর মেঘনায় সরেজমিনে গিয়ে ইলিশের পরিমাণ ও জেলেদের অবস্থার এমন চিত্র চোখে পড়ে।

এদিন ডাকাতিয়া, মেঘনা ও পদ্মা নদীর মোহনায় প্রায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি (১২ নটিক্যাল মাইল) এলাকায় ইলিশ গবেষণা জাহাজে করে সরিজমিনে গেলেও নদীতে ইলিশ মাছ ও জেলেদের দেখা মেলেনি বললেই চল। মেনার বুকে দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে হাতে গোনা মাত্র ১০-১২টি জেলে নৌকা চোখে পড়েছে। সেগুলোর মধ্যে মাত্র একটি নৌকায় দুটো ইলিশ এবং একটি তপসে মাছ চোখে পড়েছে। এছাড়া বাকি নৌকায় কোনো মাছ পাওয়া যায়নি। এ সময় মাছ না পাওয়া জেলেদের চোখে মুখে ছিল হতাশার ছাপ।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণরণ মে-জুন মাসে মেঘনা নদীতে এত বেশি জেলেদের আনাগোনা ও জাল ফেলা হয়ে থাকে যে, ঠিকভাবে জাহাজ চলতে পারে না। জেলেদের অনুরোধে জাহাজগুলোকে বিভিন্ন দিক ঘুরে ঘুরে যেতে হয়। অথচ এখন মেঘনায় জেলেদের দেখা মিলছে না। মূলত নদীতে মাছ ধরা না পড়ায় বড়ধরনের লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে জেলেরা জাল ফেলছেন না।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া গবেষণা তরী ফিশ ফাইন্ডার যন্ত্রের মাধ্যমে মেঘনা নদীর ৩০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এত বড় নদী অথচ সেখানে মাছের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। অনেক পথ চালানোর পর কালেভদ্রে কোথায় কোথাও দুয়েক জায়গায় মাছের অস্তিত্ব মিলেছে। তাও আবার আকারে ৪ থেকে ১০ সেন্টিমিটারের মতো। চাঁদপুরের হরিণার বাতেন শেখের নৌকায় দু’টি ইলিশ এবং একটি তপসে মাছ পাওয়া গেছে। এই নৌকায় ১০ জন জেলে ছিলেন। এই ১০ জনকে নিয়ে ভোরে থেকে দুপুর পর্যন্ত দু’বার প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ জাল ফেলে মাত্র তিনটি মাছ পেয়েছেন তিনি।

বাতেন শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৬ মে) ভোরে ১০ জন ভাগীদার জেলেসহ জ্বালানি তেল, জাল, নৌকাসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে মেঘনা নদীতে যাই। দুবার জাল ফেলে ৮০০ গ্রাম ও ৪০০ গ্রাম সাইজের দু’টি ইলিশ এবং একটি তপসে মাছ পেয়েছি। মাছ বিক্রি করে আয় তো দূরের কথা, খরচের টাকাই উঠছে না।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফিশিং বোট মালিক সমিতির আহ্বায়ক শাহ আলম মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ ও এপ্রিল মাসে জুড়ে দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে সবধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর মে মাসের শুরুতে নদীতে আবার মাছ ধরা শুরু হয়। তবে আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলে মাছ ধরাই বন্ধ করে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনের তেল খরচ এবং একটি নৌকায় জাল টানার জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন সে তুলনায় মাছের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এমনকি নদীতে নেমে তেল খরচই উঠছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধার দেনা করে, সুদ-কিস্তিতে টাকা এনে পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের ভাগীদার জেলেদের দিয়ে এখন সর্বশান্ত হওয়ার উপক্রম। ইতোমধ্যে অনেক ভাগীদার জেলে পরিবার-পরিজনদের বাঁচাতে অন্য কাজে চলে গেছে। এতে অনেক নৌকার মালিক নৌকা বন্ধ করে দিয়েছেন। জাল-নৌকা সংরক্ষণে মালিকরা হিমশিম খাচ্ছেন। জাল-নৌকা এখন মালিকদের গলায় ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

অন্যদিকে, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আবুল বাসার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত পরিষ্কার পানিতে ইলিশ বসবাস করে। নদীতে ঘোলা পানি দেখলেই ইলিশ মাছ স্থান পরিবর্তন করে।’

তিনি বলেন, ‘সিলেটে বন্যার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানি মিশে মেঘনার পানি এখন ঘোলা হয়ে গেছে। এই কারণে ইলিশ নদী ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ফলে জেলেরা এখন কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা পাচ্ছেন না।’

আবুল বাসার বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মে মে মাস থেকে নদীতে ইলিশ পাওয়ার কথা। বন্যা ও প্রাকৃতিক বিরূপতায় পদ্মা-মেঘনার পানি ঘোলা হওয়ায় এখন ইলিশের দেখা মিলছে না। আশা করছি মেঘনার পানি পরিষ্কার হলে আগামী জুন থেকে নদীতে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে। জেলেরা সাময়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।’

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

ইলিশ ঘোলা পানি জেলে দুষছেন মেঘনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর