Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিইসির সামনে হট্টগোলে জড়ালেন কুমিল্লা সিটির প্রার্থীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ মে ২০২২ ১৫:০৪

কুমিল্লা থেকে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সামনে হট্টগোলে জড়ালেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের প্রার্থীরা। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কাউন্সিল ও মেয়র প্রার্থীদের আলোচনায় এই হট্টগোল দেখা দেয়।

সভার শুরুতেই কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীদের আলোচনায় হট্টগোল দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণে আনেন জেলা প্রশাসক। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও কারচুপির বিরুদ্ধে প্রার্থীদের হুঁশিয়ার করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৯ মে) সকাল ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের উপস্থিতিতে সভা শুরু হয়।

সভার শুরুতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী নির্বাচনী আচরণবিধি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। পরবর্তীতে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর আসনের বিভিন্ন প্রার্থীরা বক্তব্য দেন। তারা সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের পরে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বক্তব্য দেন। এরপরেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের বক্তব্য দেওয়ার সময় সভায় হট্টগোল শুরু হয়।

তার বক্তব্যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মিলনায়তনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিবাদ জানান।

এ সময় নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘আজকে ভোটদান ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সেটি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন বক্তব্য বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন অনেক প্রহসনমূলক হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে এই কুমিল্লায়…’

বিজ্ঞাপন

তার বক্তব্যের এ সময় মিলনায়তনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, তাদের বিতর্ক করার জন্য এ ধরনের কথা বলেছেন কায়সার।

তারপরেও বক্তব্য দিতে থাকেন কায়সার। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। যারা চিৎকার করছে, তারাই মানুষের ভোটকে হরণ করেছে।’

পরে প্রতিবাদরত কাউন্সিলর প্রার্থীদের থামানোর জন্য মাইক হাতে নেন জেলা প্রশাসক আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের প্রতিনিধি আতিকুল্লাহ খোকন। তিনি কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে নাম ধরে থামতে বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসকে অনুরোধে শান্ত হয়ে আসে।

পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরে আবারও বক্তব্য দেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি তার বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ইভিএমে সুষ্ঠু ভোটের পাশাপাশি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘ইভিএমে ভোট দেওয়ার পরে সেটার কপি প্রিন্ট আউট যেন ভোটার পায় তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আদালতের সুনির্দিষ্ট গ্রেফতার পরোয়ানা ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কর্মীদের মামলা দিয়ে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না।’ একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দুইজন কমিশনারকে ১ জুন থেকে কুমিল্লা থাকার অনুরোধ জানান নিজাম উদ্দিন কায়সার।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে আতিকুল্লা খোকন বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যে-ই আসেন সবাই কুমিল্লা দিয়েই নির্বাচন শুরু করেন।’ এ সময় তিনি ইভিএমে ফিংগারপ্রিন্ট দিয়ে ভোট দিতে সমস্যা হলে আইডি কার্ডের মাধ্যমে দেওয়া যায় কিনা— জানতে চান ইসি’র কাছে। একইসঙ্গে নির্বাচনের দিন যাতায়াতের জন্য নির্বাচন কমিশন কোনো পরিবহন সুবিধা দিবে কিনা তাও জানতে চান।

প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের দিকে অভিযোগ তুলে আতিকুল্লা খোকন বলেন, ‘এখন তো সবাই হেলমেট পার্টির কথা বলে। কিন্তু কে বা কারা এগুলো করে তা জানা নেই৷ প্রার্থী যদি নিজেরাই ভাঙচুর করে সরকারি দলের দিকে দোষ চাপানোর ঘটনা যেন না ঘটে এদিকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষ খেয়াল রাখবে বলে আশা করি।’

পরবর্তী সময়ে অন্য মেয়র প্রার্থীরাও নির্বাচন সুষ্ঠু করার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। এসময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে পেশিশক্তি ব্যবহার করে কোনো লাভ নেই। কেউ কোনো কেন্দ্রে পেশিশক্তির ব্যবহার হলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে এর দায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

সিইসি বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরশনে আনন্দময় একটি পরিবেশ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা চাই। আচরণ বিধিমালা সকলে মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে কমিশন কঠোর অবস্থানে যাবে। প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। এমনকি নির্বাচনের পর চলমান থাকবে।’

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নাবী চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদার ও কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহাম্মদ।

সারাবাংলা/এসবি/একে

কুমিল্লা কুসিক নির্বাচন নির্বাচন কমিশনার সিইসি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর