Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবৈধ সম্পদের মামলা: প্রদীপ-চুমকির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ মে ২০২২ ১৮:১৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মোট ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রোববার (২৯ মে) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদ এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ৬ জুন সময় নির্ধারণ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণের শেষদিনে প্রদীপ কুমার দাশ ও চুমকি কারণকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলা তদন্তকারী দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনকে জেরার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৬ জুন ৩৪২ ধারায় আসামিদের পরীক্ষা করা হবে। অর্থাৎ আসামিরা নিজেদের নির্দোষ নাকি দোষী মনে করেন, সেটি জানতে চাওয়া হবে। আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করলে তাদের জেরা করা হবে। এরপর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ে তারিখ নির্ধারণ হবে।’

আরও পড়ুন-

প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ ও সন্তানদের নিয়ে তিনি বসবাস করতেন।

বিজ্ঞাপন

প্রদীপ কুমার দাশ সবশেষ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ওই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন প্রদীপ কুমার দাশ। ওই মামলায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হত্যা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও চুমকি কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের হয়। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২-এর উপসহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১-এ মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ করে। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়।

তদন্তের পর ২০২১ সালের ২৬ জুলাই দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আদালতে দু’জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

অভিযোগপত্রে প্রদীপের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে সেই সম্পদ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করা হয়। এছাড়া দু’জনের বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দুদক।

অভিযোগপত্রে চুমকি কারণের নামে নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয় তলা বাড়ি, পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমি এবং কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকার একটি ফ্ল্যাটের বিষয় উল্লেখ আছে।

সম্পদ বিবরণীতে চুমকি কারণ নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে সম্পদ অর্জনের তথ্য দিয়েছিলেন। তবে অভিযোগপত্রে মাছের ব্যবসা থেকে চুমকির আয়ের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের মামলায় আসামি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল।

অবৈধ সম্পদের মামলা দায়েরের পর থেকে চুমকি কারণ আত্মগোপনে ছিলেন। গত ২৩ মে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

অবৈধ সম্পদের মামলা ওসি প্রদীপ চুমকি কারণ টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর