আবেদন করে বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেতে চাননি গাফফার চৌধুরী
২৯ মে ২০২২ ১৮:১১
ঢাকা: বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য নিজে আবেদন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিংবদন্তি লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্তির জন্য সরকার নির্ধারিত নিয়মে আবেদনের অনুরোধের পরও গাফফার চৌধুরীকে রাজি করানো যায়নি বলে জানিয়েছেন ১৯৭১ সালের যুক্তরাজ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোজাম্মেল আলী।
অমর একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউক আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এ তথ্য জানান। শনিবার (২৮ মে) যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে ‘আমি কি ভূলিতে পারি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল স্মরণ সভার আয়োজন করে।
ভার্চুয়াল আলোচনায় ভিডিও বার্তায় গাফফার চৌধুরীর কন্যা ড. তনিমা চৌধুরী জানান, বাবা ছিলেন তাদের জীবনে বট গাছের মতো। ছোটবেলায় তিনি বাবার কাঁধে বসে থাকতেন। যদিও গাফফার চৌধুরী বাঙালি জাতির আইকন, কিন্তু তার কাছে শুধুই একজন বাবা।
তিনি বলেন, ‘পিতা হিসেবে তিনি ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণা। সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবসময় তিনি আমাদের সহযোগিতা করতেন। তবে মৃত্যুর ৩৫দিন আগে বিনিতার মৃত্যুতে তিনি সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছিলেন। দু’জন দুই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ডাক্তারদের অনুমতি পাওয়ায় পিতা-কন্যার শেষ দেখা হয়নি। বিনিতা বাবাকে বলেছিল, আমি যদি তোমার আগে যাই তোমার জন্য অপেক্ষা করব, আর তুমি আমার আগে গেলে আমার জন্য অপেক্ষা কোরো।’
ড. তনিমা বলেন, ‘গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাবাকে তিনি প্রথম কাঁদতে দেখেছিলেন।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ অপর এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘১৫ আগস্টের কষ্ট আর বেদনাকে সঙ্গে নিয়ে মূঢ় হয়ে থাকেন নাই আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ শুরু করেছেন। ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে, তিরস্কার করে বিশ্ব পরিমণ্ডলে প্রথম লেখাটি লিখেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে’র ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও অনুষ্ঠানের চেয়ার বিধান গোস্বামী আবদুল গাফফার চৌধুরীর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফফার চৌধুরী চেয়ার স্থাপনের দাবি জানান। অনুষ্ঠানের মডারেটর সাংবাদিক তানভীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আবদুল গাফফার চৌধুরী নামে ফেলোশিপ প্রবর্তনের প্রস্তাব দেন।
ভার্চুয়াল আলোচনায় আবদুল গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন ব্যরিস্টার চৌধুরী হাফিজুর রহমান, ব্যরিস্টার কাজী আশিকুর রহমান, লিংকনস ইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, জার্মানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য পলি জাহান ও শওকত আলী বেনু।
অনুষ্ঠানে সিনিয়র অ্যালামনাই ও ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ব্যরিস্টার অজয় রায় রতন, সোনালি ব্যাংক ইউকের সাবেক সহকারী প্রধান নির্বাহী আমীরুল ইসলাম, প্রদীপ মজুমদার, ঝুমুর দত্ত, পুষ্পদেব, ফাতেমা লিলি, চিত্রকর মাসুদ মিজান, মোকাররম হোসেন, সাংবাদিক জুনায়েদ জিলানী, আরিফুর রহমান, সুলতানা রশীদ নাসরিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গাফফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া অমর একুশের সঙ্গীত রচনার প্রেক্ষাপটের উপর ধারণ করা একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর শেষ টেলিভিশন সাক্ষাৎকার ‘রক্তে রাঙানো একুশের সত্তর’র ধারণকৃত অংশ প্রচার করা হয়।
সারাবাংলা/পিটিএম