Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে গিয়ে গৃহবধূকে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ মে ২০২২ ২১:১৮

বাম থেকে তোজাম হোসেন সরকার ও শিহাব উদ্দিন, ছবি: সারাবাংলা

জয়পুরহাট: জেলার কালাই উপজেলার জমাজমি সংক্রান্ত জেরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে নিজের ঘরে গলা কেটে গৃহবধূ শিপন আক্তারকে (৪৫) হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছেন স্বামী ও তার বড় সন্তান। রোববার (২৯ মে) বিকেলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেস্ট আতিকুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা।

এর আগে, সন্দেহের কারণে পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গৃহবধূর স্বামী ও সন্তানসহ বেশ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে আসার পর বাবা-ছেলে মিলে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বর্ণনা দিলে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অভিযুক্ত স্বামী উপজেলার দুধাইল-নয়াপারা গ্রামের মৃত আলেক উদ্দিন সরকারের ছেলে তোজাম হোসেন সরকার (৫২) এবং তার ছেলের নাম শিহাব উদ্দিন (২০)। গত শনিবার (২৮ মে) সকালে এই ঘটনার পর পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য জানতে তাদেরসহ বেশ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর ভাই শাহজাহান আলী বাদী হয়ে পিতা-পুত্রকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গত শুক্রবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময়ে দুধাইল-নয়াড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই গৃহবধূকে দূর্বৃত্তরা জবাই করে হত্যা করেছে বলে প্রথমে পিতা-পুত্র মিলে অভিযোগ তোলেন। তাদের এমন কথায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নামেন সিআইডি ও ডিবিসহ পুলিশের একাধিক টিম।

গৃহবধূর স্বজন, প্রতিবেশী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাত থেকে আট বছর পূর্বে প্রতিবেশী আয়নাল হকের ছেলে আহসানের নিকট থেকে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন নিহত গৃহবধূর স্বামী তোজাম হোসেন সরকার। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ওই জমির দলিল হয়নি। বর্তমানে জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রেতা সেই জমি দলিল করে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে বেশকিছু দিন ধরে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে। জমি উদ্ধার এবং প্রতিবেশীসহ আরও বেশ কয়েকজনকে উচিত শিক্ষা দিতে গৃহবধূকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার স্বামী ও সন্তান। এ পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার রাতে খাবারের পর ঘরের দরজা খোলা রেখে গৃহবধূ শিপন আক্তার তার ৮ বছর বয়সের ছোট ছেলে তুহিনকে নিয়ে নিজ ঘরে শুয়ে পড়েন। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় ছেলে শিহাব ও তার বাবা অন্য একটি ঘরে শুয়ে পড়েন। রাতের কোনো এক সময়ে বাবা ও ছেলে মিলে গৃহবধূর কক্ষে প্রবেশ করে তাকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করার পর ঘরের মেঝেতে মরদেহ ফেলে রাখেন। পরে তারা পুলিশে খবর দিলে মৃতদেহ উদ্ধার করে তা ময়না তদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠান।

তবে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই প্রতিবেশীদের অভিযোগ ছিল- নিরপরাধ লোকজনদের ফাঁসাতে বাবা ও ছেলে মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। তাই তারা গৃহবধূর স্বামী তোজাম হোসেন সরকার এবং তার ছেলে শিহাবকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুরোধ করেছিলেন প্রশাসনের নিকট। আর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পরই হত্যাকাণ্ডের রহস্য প্রকাশ পেলো।

নিহতের ভাই ও মামলার বাদী শাহজাহান আলী বলেন, ‘প্রথম থেকেই পুরো পরিবারের সন্দেহ ছিল তাদের উপর। বাবা যেমন চতুর, তেমনি চতুর ছিল ছেলেটিও। জমি নিয়ে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতেই পিতা-পুত্র মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওদের দু’জনের কঠিন শাস্তির দাবি করছি।’

কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মঈনুদ্দী জানান, পিতা-পুত্র মিলে গৃহবধূকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন। রোববার বিকেলে তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করার জন্য চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেস্ট আদালতে হাজির করা হয়ে। আদালতের কাছেও তারা একই জবানবন্দি দেন।

সারাবাংলা/এনএস

গৃহবধূকে হত্যা জয়পুরহাট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর