সরবরাহ ঘাটতিতে মুরগি, ইদকে সামনে রেখে চড়া মসলার বাজার
৩১ মে ২০২২ ১০:১২
ঢাকা: ইদুল ফিতরের পর এই সময়ে মসলার বাজারে স্বস্তি থাকার কথা ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। দাম তো কমেনি বরং ইদুল আজহাকে সামনে রেখে এখনই দাম বাড়তির কথা শোনা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মুখে। তারা বলছেন, ইদের সামনে বেশ চড়া থাকবে মশলার বাজার। অন্যদিকে বাজারে মুরগির সরবরাহও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ব্যবসায়ীদের ধারণা, যেকোনো সময় মুরগির দামও বাড়তে শুরু করবে।
রোববার (২৯ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে দেশি লাল মরিচের দাম কেজিতে ২৪০ টাকা, বিদেশি লাল মরিচ ৩৫০ টাকা, ধনিয়া ১৫০ টাকা, ইন্ডিয়ান জিরা ৪০০ টাকা, সিরিয়ান জিরা ৫৫০ টাকা, সাদা এলাচি ২৫০০ টাকা, সবুজ এলাচি ৩৬০০ টাকা, সরিষা ১৫০ টাকা, তিল ৩৮০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১১০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ধনিয়া গুড়া ১৬০ টাকা, হলুদের গুড়া ২২০ টাকা, মরিচের গুড়া ২৬০ টাকা, তেজপাতা ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মসলার দাম নিয়ে কথা হলে ব্যবসায়ী সাকিব বলেন, গত রোজার ইদের পর ভেবেছিলাম মসলার দাম কিছু কমবে। কিন্তু কমেনি। ইদের পর থেকে একই আছে। তবে কোরবানির ইদকে সামনে রেখে মসলার চাহিদা বাড়বে, বেড়ে যাবে দামও।
পেঁয়াজ-রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনী মসলার আমদানিও অনেক কমে গেছে বলে জানালেন রাজধানী অন্যতম প্রধান এই কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল জানান, এর আগে প্রতিদিন মসলা নিয়ে সহস্রাধিক ট্রাক প্রবেশ করত এই বাজারে। বর্তমানে সেই সংখ্যা অনেক কম। আমদানি না বাড়ালে দাম আরও বাড়বে।
বর্তমানে পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, আদা খুচরা ৯০-১০০ টাকা কেজি, দেশি রসুন ৮০-৮৫ টাকা কেজি, ভারতীয় রসুন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। গত এক সপ্তাহ ধরে মোটামুটি এই দামেই বিক্রি হচ্ছে।
মসলা আমদানিতে অন্যতম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরেও চলতি সপ্তাহে বেড়েছে মসলার দাম। সারাবাংলার হিলি করেসপন্ডেন্ট স্থানীয় বাজার ঘুরে জানান, সেখানে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ভারতীয় আমদানি করা জিরার দাম ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। লবঙ্গ ও সাদা এলাচের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা, কালো এলাচের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা, দারুচিনি ১০ টাকা ও কাজুবাদামের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। তবে স্বাভাবিক রয়েছে গোলমরিচসহ অন্য সব মসলার দাম।
হিলি বাজারের পাইকারি মসলা ব্যবসায়ী সিফাত হোসেন বলেন, সবধরনের মসলার দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে মসলা বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়তে হচ্ছে। আসলে দাম বাড়ার মূল কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। যেহেতু বেশিরভাগ মসলা আমদানি করতে হয়, তাই ডলারের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই মসলার দাম বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে কারওয়ান বাজারে বর্তমানে পাকিস্তানি মুরগীর পাইকারি দাম ২৮৫ টাকা কেজি, খুঁচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। ফার্মের মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা কেজি। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি। লাল লেয়ার মুরগির দাম পাইকারি কেনা ২৬০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা।
কথা হয় মুরগি ব্যবসায়ী মো. ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি জানান, কোরবানির ইদকে সামনে রেখে দাম আরও বাড়বে।
তিনি আরও জানান, মুরগির খাবারের দাম বেশি। অনেকে লোকসানের মুখে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। যার কারণে উৎপাদন এবং আমদানি কম। এর আগে যারা আর্থিকভাবে একটু দুর্বল তারা এই পাকিস্তানি মুরগির খামারের ব্যবসাটা করত। এখন তারা আর পারছে না। খাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়াই মূল কারণ। ফার্মের মুরগির দাম কম আছে। পাইকারি কেনা হচ্ছে ১২৫ টাকা কেজি। বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা কেজি।
এই দাম প্রায় অনেকদিন ধরেই আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন যারা মুরগির ব্যবসা করছে, তারা অনেকেই কোরবানির ইদে গরুর ব্যবসা করবে। এজন্য ব্যাপারির সংখ্যাও কমে যাবে। আমদানি পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলে দাম অবশ্যই বেড়ে যাবে।
তবে তুলনামূলক স্বস্তি ছিল সবজির বাজারে। বাজারঘুরে দেখা যায়, পেঁপে ৫০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৩০ টাকা কেজি, করলা ৪০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি, ঝিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি, পটল ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৬০ টাকা কেজি ও মরিচ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা সবজি ব্যবসায়ী আরিফ খান বলেন, এখন তো সিজন না। সিজন ছাড়া সময় হিসাবে সবজির দাম অনেক কম। সিজনের সময় লাউ বিক্রি করতাম ৩০-৪০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সেই তুলনায় দাম অনেক কম। দেশের কিছু উঁচু জায়গায় এখনো এসব সবজি চাষ হচ্ছে, যার কারণে এখনও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। নাহলে তো অনেক দাম থাকত সবজির।
কোরবানির আগে সবজির দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, টমেটো, শসা, গাজর এই তিনটা আইটেমের দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ সালাদ আইটেমের চাহিদা বাড়বে। টমেটো এখনো দেশিটা বিক্রি হচ্ছে। ইন্ডিয়ান টমেটো আসা শুরু হলে দাম আরও বাড়বে। কারণ তখন আমদানি খরচ, শ্রমিক খরচ বেড়ে যাবে।
দক্ষিণ বনশ্রীর রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মিরাজ উদ্দিন জানান, কারওয়ান বাজারে এলাকায় এসেছিলাম একটা কাজে। ভাবলাম কিছু বাজার করে নিয়ে যাই। সবজির দাম এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে সমস্যা হচ্ছে দাম বাড়লে আর কমে না। বেশি দামে কিনতে কিনতে ওইটাই সহনীয় হয়ে যায়।
সারাবাংলা/এসএসএ/এএম