সংবিধান বদলে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে জার্মানি
৩০ মে ২০২২ ১৪:০৪
জার্মান সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার যে বিশাল তহবিল গঠন করছে, প্রধান বিরোধী শিবিরের সঙ্গে সে বিষয়ে বোঝাপড়া হয়েছে। ফলে, সংবিধান সংশোধন করে সেনা ক্ষমতায়নের বাধা দূর হয়েছে।
এর আগে, ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর তিন দিনের মাথায় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ জার্মান সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে ১০ হাজার কোটি ইউরোর বিশেষ তহবিলের ঘোষণা করেছিলেন। সেই সঙ্গে ন্যাটোর মানদণ্ড অনুযায়ী বছরে জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের কমপক্ষে দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়েরও অঙ্গীকার করেছিলেন।
কিন্তু, সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে গত প্রায় তিন মাসে অনেক বাধাবিপত্তি দেখা গেছে। বিশেষ করে বিশাল অংকের তহবিল ঠিক কোন কাজে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এককালীন এই তহবিলের ব্যয়ভার মূল জাতীয় বাজেটের বাইরে রাখতে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়েছে। যার জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন। কারণ বাড়তি ঋণের মাধ্যমে সেই অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
রোববার (২৯ মে) জার্মানির বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে অবশেষে বিষয়টি নিয়ে রফা করতে পেরেছে সরকারি জোট।
এদিকে, শীতল যুদ্ধের পর থেকে ধারাবাহিক ব্যয় সংকোচনের ধাক্কায় জার্মান সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছিল। ১৯৯০ সালে প্রায় পাঁচ লাখ সৈন্য বুন্ডেসভেয়ারে সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় দুই লাখে এসে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে সামরিক সরঞ্জামের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বিকল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ৩০ শতাংশেরও কম রণতরী পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব। তার ওপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সামরিক অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে বাড়তি চাপের মুখে পড়ছে বুন্ডেসভেয়ার। ফলে জার্মানির প্রতিরক্ষা ও প্রয়োজনে ন্যাটোর সহযোগীদের সহায়তার ক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান সরকার নতুন করে সক্রিয় হয়েছে।
রোববার জার্মানির সরকার ও প্রধান বিরোধী শিবিরের মধ্যে বোঝাপড়ায় ১০ হাজার কোটি ইউরো অংকের বিশেষ তহবিলের ব্যবহার স্থির করা হয়েছে। ফলে সেই অর্থ শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর আধুনীকিকরণের কাজে লাগানো যাবে। সাইবার নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা কাঠামোর বৃহত্তর কোনো লক্ষ্য পূরণ করতে সেই অর্থ ব্যবহার করা যাবে না।
বিশেষ তহবিলের বিষয়টি জার্মানির সংবিধানে অন্তর্গত করার লক্ষ্য স্থির করা হলেও বাৎসরিক প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অঙ্গীকার সংবিধানের বাইরেই রাখা হচ্ছে। শোলজের এসপিডি দলের নেতা সাসকিয়া এস্কেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, বাস্তবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্তের পর সেগুলি হাতে পেতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ফলে প্রতি বছর একই অংকের ব্যয় সম্ভব হয় না। তাছাড়া জিডিপি’র হিসাব করতেও সময় লাগে। তাই প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ক্ষেত্রে গড় হিসাব প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতিরক্ষা খাতে জার্মানির দুর্বলতা কাটাতে চ্যান্সেলর শোলজ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের উদ্যোগ নিলেও ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার প্রশ্নে ঢিলেমির কারণে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ছেন। এমনকি তার সরকার যে সামরিক সরঞ্জামের অঙ্গীকার করছে, বাস্তবে সেগুলোর সরবরাহের ক্ষেত্রে দীর্ঘ বিলম্ব দেখা যাচ্ছে।
সারাবাংলা/একেএম