প্রত্যন্ত এলাকায় ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে
৩০ মে ২০২২ ১৭:২৩
ঢাকা: আসন্ন বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন— ওয়াশ) খাতে প্রত্যন্ত এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি উঠেছে। বলা হয়েছে, আন্তঃশহর বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। একইসঙ্গে এসডিজি অর্জনে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে।
সোমবার (৩০ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, ফানসা বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্ট্রিগিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, এন্ড ওয়াটার পোভার্টি, এমএইচএম, ইউনিসেফ এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত বাজেটপূর্ব এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনের ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে অবস্থা এখনো সন্তোষজনক নয়। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনের ক্ষেত্রে শহরের মতো গ্রামেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ করতে করতে হবে।
তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে সাত বছর চলে গেছে। আর আট বছর বাকি আছে। এই আট বছরে আমাদের সঠিক নীতি মেনে কার্যকর প্রকল্প নিতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা দূর হয়েছে— এমন মনে করার দরকার নেই বলে মন্তব্য করেন ড. জিল্লুর। তিনি বলেন, হাইজিন বাস্তবায়নে সবসময়ই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরি। চারটি বড় শহরের ওয়াসার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা। রাজশাহী মোটামুটি বরাদ্দ পেলেও খুলনা বরাদ্দ পায় একেবারেই কম— মোট বরাদ্দের মাত্র ৩ শতাংশ। এই বৈষম্য কমাতে হবে। শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যেও বাজেট বরাদ্দে বৈষম্য কমাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ওয়াশ খাতে বাজেট বরাদ্দের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এডিপির মোট বরাদ্দের (২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা) হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ (১৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা)। এসময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এসব এলাকায় বরাদ্দ পাঁচ বছর আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ৭২ শতাংশ কমে গেছে।
আরও বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে প্রত্যন্ত এলাকা, চর ও পাহাড়ি উপকূলীয় অঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে সর্বোচ্চ তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ অনুন্নত এসব এলাকায় বরাদ্দের প্রয়োজন শহরাঞ্চলের চেয়ে বেশি। তাই আসন্ন বাজেটে প্রান্তিক একালাগুলোর প্রয়োজন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের জন্য ছয়টি সুপারিশ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— এসডিজি ৬.১.১ ও এসডিজি ৬.২১ অর্জন নিশ্চিত করতে বরাদ্দ বাস্তবায়নে মানসিকতার পরিবর্তন ও কার্যকর এডিপি প্রকল্প নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে; অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানো ও আন্তঃশহর বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা উচিত; এবং ওয়াশ খাতে এডিপি বরাদের আরও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের সমাধান করতে হবে।
সুপারিশে আরও বলা হয়— হাইজিনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য শুধুমাত্রা বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে না, পাশাপাশি কোডিড পরবর্তী বাস্তবতায় নগরে স্বাস্থ্য, স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে; যেসব এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে, সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ওয়াশের সুবিধা নিশ্চিত করে এতে সুযোগ বাড়াতে হবে; এবং শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যবিধি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ বাজেট বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, পিপিআরসি’র সিনিয়র ফেলো মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
ইউনিসেফ বাংলাদেশ ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ওয়াশ ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল ওয়াশ খাত পানি স্যানিটেশন ও হাইজিন পিপিআরসি