‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড’
৩০ মে ২০২২ ১৮:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অবৈধভাবে কেউ ক্ষমতা দখল করলে সংবিধান অনুযায়ী তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড— এই বিধান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি জাতীয় সরকারের নামে জিয়াউর রহমানের স্টাইলে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন কাউকে না দেখারও আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (৩০ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নগরীর পাঁচলাইশে কিং অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা এবং বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এসময় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলও ছিলেন।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। আগামী নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ— ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবে নির্বাচন হবে। ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে না। কারা আজ আমাদের গণতন্ত্র শেখায় ? বিএনপি—এই বিএনপি ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া দল। তারা কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না।’
জাতীয় সরকারের তত্ত্বকে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন বলছে জাতীয় সরকারের কথা। জাতীয় সরকার করতে হলে আগে কথা দে— নির্বাচনের বাইরে কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে কখনও ক্ষমতা হস্তান্তর হবে না। আর কোনোদিন অবৈধ শক্তি ক্ষমতায় যেতে পারবে না—সংবিধানে আমরা সেটা রেখেছি। যদি কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা নেয়, নেওয়ার চেষ্টা করে, ষড়যন্ত্র করে কিংবা হুমকি দেয়-তাদের প্রধান শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।’
‘ওদের চেহারা জনগণের সামনে উন্মোচিত করতে হবে। অপকর্ম করলে মাফ নাই। ফাঁসিতে ঝুলতে হবে। সুতরাং লোভ করো না।’— বলেন শেখ সেলিম
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সরকারের নামে জিয়াউর রহমানের মতো ক্ষমতা দখল করবি- সেটা হবে না। তোরা (বিএনপি) নির্বাচনে আসলে আসবি, না আসলে আসবি না। সত্তরের নির্বাচনে বিপ্লবী দল ন্যাপ প্রার্থী দিল, হঠাৎ কি হল তারা নির্বাচন থেকে সরে গেল, আজ ন্যাপ কোথায় ? ন্যাপের আজ অস্তিত্ব নেই। সুতরাং অস্তিত্ব বাঁচাতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘পরিস্কারভাবে বলছি, আগামী সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। যারা জাতীয় সরকারের কথা বলছে, তারা অসাংবিধানিক পথ খুঁজছে। যেসব সুশীল জাতীয় সরকারের ফর্মুলা দিচ্ছে, তারা অগণতান্ত্রিক সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টা হওয়ার পথ খুঁজছে। জাতীয় সরকারের স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন হয়েই থাকবে। আওয়ামী লীগ সরকার কচুপাতার পানি নয় যে ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। যারা জাতীয় সরকারের কথা বলছেন তাদের বলব, নিয়মতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করুন। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন।’
চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চুর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা মঞ্চে ছিলেন।
নগর যুবলীগের বিদায়ী কমিটির তিন নেতা মহিউদ্দীন বাচ্চু, দেলোয়ার হোসেন খোকা ও ফরিদ মাহমুদ অনুষ্ঠানের মঞ্চেই আওয়ামী লীগের সদস্যপদ পূরণ করে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের হাতে তুলে দেন। এর মধ্য দিয়ে তারা যুবলীগ থেকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তবে মাহবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম আবার নগর যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন।
২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে চন্দন ধরকে সভাপতি ও মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর যুবলীগের কমিটি হয়। সেই কমিটি বিলুপ্ত করে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১০১ সদস্যের কমিটির মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল ৯ বছর পর।
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ