সাংবাদিকের ‘বৈধ’ গ্যাস সংযোগ কাটার কারণ জানতে চাওয়ায় জরিমানা!
৩০ মে ২০২২ ২১:২১
ঢাকা: রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে চলমান অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান চলাকালে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তিতাসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য জানতে চাওয়ায় এক সাংবাদিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই জরিমানার আদেশ দেন ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক ঢাকা প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার ও ক্র্যাবের সাবেক অর্থ সম্পাদক এসএম দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও বকেয়া বিল আদায়ে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়েই গত ১০ মে থেকে হঠাৎ করেই গোটা কামরাঙ্গীরচরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বৈধ গ্রাহকসহ জনমনে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় তিন জন জনপ্রতিনিধি তিতাস গ্যাস কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।’
পরবর্তীতে গত ১৯ মে কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুরে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি কমিউনিটি সেন্টারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-গ্রাহকদের সঙ্গে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিকাংশ গ্রাহকই তাদের ভবনের বর্ধিত গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৩ মে থেকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও বকেয়া বিল আদায়ে কামরাঙ্গীরচরে অভিযান শুরু হয়।
ঢাকা প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার বলেন, ‘অভিযানের ধারাবাহিকতায় সোমবার (৩০ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিতাসের একটি দল আমার বাড়িতে অভিযানে আসে। আমার বাড়িতে বর্ধিত সংযোগ না থাকার পরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তিতাস কর্তৃপক্ষ আমার বৈধ চুলার সংযোগকৃত রাইজারটি খুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে একজন গণমাধ্যমকর্মী ও গ্রাহক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে রাইজার খুলে নেওয়ার কারণ ও দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নাম জানাসহ ঘটনার তথ্য জানতে চাইলে ছোট ভাইসহ আমাকে ধরে নিয়ে যায়।’
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ সময় আমি জিজ্ঞাসা করি, আশপাশের ভবনগুলোতে কেন অভিযান চালাচ্ছেন না? এই কথা শুনে রেগে যান ওই ম্যাজিস্ট্রেট। রেগে গিয়ে তিনি বলেন, আপনাকে বলে তো আমি অভিযান চালাব না। এরপর পুলিশি প্রহরায় খলিফাঘাট এলাকায় একটি গাড়িতে বসিয়ে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পর ওই ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ডেকে নিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ও মুচলেকা রেখে দেয়। এ নিয়ে আকুতি জানালেও কর্ণপাত করেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে ঋণ করে সেই টাকা জমা দেওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু রাইজারটি নিয়ে গেছে।’
সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেনের বাসায় অভিযান চালিয়ে রাইজার খুলে নেওয়া এবং জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনি তিতাসের ডিজিএম’র সঙ্গে কথা বলেন।’ গ্যাস সংযোগটা কি অবৈধ ছিল? জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর কোনো উত্তর দেননি।
এর পর পুলিশ দিয়ে আটকিয়ে রাখা এবং জরিমানার ১০ হাজার টাকা পরিশোধের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। ধন্যবাদ।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম