Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দেশে ১৩৩টি সশস্ত্র মৌলবাদী দল সক্রিয়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ মে ২০২২ ১৬:০৪

ঢাকা: দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে ১৩৩টি সশস্ত্র মৌলবাদী দল কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা নূর আহমেদ বকুল। এই মৌলিবাদীদের হাতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষ নির্যাতিত হচ্ছেন। এমনকি তারা দেশে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে ওয়ার্কার্স পার্টির আয়োজিত ‘বাংলাদেশ জামাত ইসলামের উত্থান রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন নূর আহমেদ বকুল। এতে ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক অতুল দাস আলো, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক ও জান্নাতুল ফেরদৌস লাকি বক্তব্য রাখেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় বক্তারা জানান, দেশের উন্নয়ন হয়েছে। নতুন নতুন রাস্তা ঘাট এবং বড় বড় সেতু হয়েছে। কিন্তু দেশের রাজনীতি সংস্কৃতি সবকিছু অন্ধকারে ঢেকে আছে। ধর্ম এবং অর্থনীতি একসঙ্গে মিশে গেছে। বসুন্ধরা গ্রুপে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হচ্ছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের অন্যতম একজন। সবকিছুতে যেন কাল একটি ছায়া ঢেকে দিচ্ছে। জাতির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। তাই জাতি ও সংস্কৃতি বিকাশের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে রাজপথে লড়াই করতে হবে। এজন্য নির্ভেজাল জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

এ বিষয়ে নূর আহমেদ বকুল বলেন, ‘সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর পর বাংলাদেশ হারিয়ে গিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা হারিয়ে গেছে। আর অষ্টম সংশোধনী বিলের মাধ্যমে এটাকে পরিপূর্ণ করেছেন স্বৈরাচারী সরকার এরশাদ ও পরবর্তীতে বিএনপি চেয়ারপারন খালেদা জিয়া।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশটাকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে ১৩৩টি সশস্ত্র মৌলবাদী দল কাজ করছে। এই মৌলবাদীদের হাতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি নারী-পুরুষ ও সর্বস্তরের মানুষ নির্যাতিত হচ্ছেন। তারা দেশে জটিল সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে চলে যাবে।’

মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সারাদেশে মদ, জুয়া ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ শুরু হয়। জামাতে ইসলামী এসবের বিরোধিতা করলেও মূলত তারা এসব এর পক্ষে। তারা হাদিস-কোরআনের অপব্যাখ্যা দিয়ে রাজনীতি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সশস্ত্র মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশের মধ্যে অরাজগতা সৃষ্টি করার জন্য ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তাদের কারণে অনেক সম্প্রদায়ের লোক দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। জামাত ইসলামি শয়তানের অনুচর, এই গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ করতে হবে। আর তা না হলে দেশে গুপ্তহত্যা চালাবে তারা। বাংলাদেশকে কারবালা পরিণত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা।’

সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের অব্যবস্থাপনা এবং ধ্যান-ধারণা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর সরকার এই ধারণা থেকে বের হওয়ার আগেই তাকে সপরিবারে ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। এর পরবর্তী সরকারগুলো ওই ধ্যান-ধারণায় দেশ পরিচালনা করছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা ছিলেন, তারা সামরিক বাহিনীসহ পুলিশ সিভিল প্রশাসনের ঢুকে পড়েন। যেমন স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে দেশে স্বৈরতন্ত্র চালিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ খন্দকার মোশতাকের কেবিনেট হাত মিলিয়েছে। এছাড়া বামধারার রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নীতি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় টুকরো টুকরো হয়েছে। বাম ধারার একটি অংশ সরকারের সঙ্গে রয়েছে। সরকারের সঙ্গে থেকে তারা দলকে শক্তিশালী করতে পারিনি, বরং সরকারি দুর্নামের ভাগি হয়েছে। রাজনীতি কৌশলের কাছে বাম দলগুলো নীতি বিসর্জন দিয়েছে। জামাতকে মোকাবিলা করতে গিয়ে হেফাজতের সঙ্গে হাত মিলান হয়েছে, হেফাজত আর জামাতের মধ্যে পার্থক্য কি?- এই প্রশ্ন রেখে গেলাম।

আবু সাঈদ খান আরও বলেন, ‘বামধারার রাজনৈতিক দলগুলো টুকরো টুকরো হলেও এই অব্যবস্থাপনা ও পাকিস্তানের ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তনের জন্য এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই বাম রাজনৈতিক দলগুলোই শুরু করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

জান্নাতুল ফেরদৌস লাকি বলেন, ‘প্রশাসনের যে জায়গাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেখানেই মৌলবাদীদের সমর্থকগোষ্ঠীদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। এ থেকে রাষ্ট্রকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

১৩৩টি সশস্ত্র মৌলবাদী দল নূর আহমেদ বকুল বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর