কোভ্যাক্স থেকে সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন পেয়েছে বাংলাদেশ
১ জুন ২০২২ ০৯:০৭
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র কোভ্যাক্স থেকেই পেয়েছে ১৯ কোটিরও বেশি ভ্যাকসিন। এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (গাভি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স। কোভ্যাক্সের আওতায় ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইউনিসেফ। ২০২১ সালের ১ জুন দেশের প্রথমবারের মতো কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন এসে পৌঁছায়। এই এক বছরে দেখা গেছে, কোভ্যাক্সের আওতায় বিশ্বের অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় সবচাইতে বেশি ভ্যাকসিন পেয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৩১ মে) ইউনিসেফ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত করোনার যত ভ্যাকসিন পেয়েছে তার ৬২ শতাংশেরও বেশি পেয়েছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। দেশে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোভিড-১৯ টিকাদান শুরু হয়। ইউনিসেফ বাংলাদেশে প্রথম কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিন সরবরাহ করে গত বছরের ১ জুন। এমন এক সময়ে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয় যখন দেশের মাত্র ৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন পেয়েছিল। এক বছর পর সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য অংশীদারের মধ্যে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্বের কল্যাণে বাংলাদেশ বিস্ময়করভাবে ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে পুরোপুরি দুই ডোজ ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হয়েছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৯ শতাংশ।
কোভেক্সের আওতায় ভ্যাকসিন পাওয়া বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় সংকল্প এবং অবিচল নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ আশ্চর্যজনক সক্ষমতা দেখিয়েছে। কোভেক্সের আওতায়, ইউনিসেফের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের অবিচ্ছিন্ন প্রাপ্যতা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিশ্রমের কারণে আমরা ভ্যাকসিন নষ্ট না করেই সারাদেশের মানুষের কাছে তা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পৌঁছে দেওয়া, চাহিদা তৈরি করা, উপাত্ত ব্যবস্থাপনায় সহায়তা প্রদান এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমেও ইউনিসেফ সরকারের কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সহায়তা দিয়েছে। এই বিনিয়োগগুলো কোভিড-১৯ সংকটের পর সামনের বছরগুলোতেও বাংলাদেশের মানুষকে অব্যাহতভাবে সেবা দিয়ে যাবে।
শেলডন ইয়েট বলেন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং ভ্যাকসিনের ন্যায়ভিত্তিক সরবরাহ বজায় থাকলে কী অর্জন করা যেতে পারে, বাংলাদেশের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং টিকাদান অব্যাহত রাখার সক্ষমতাই তার প্রমাণ। দ্রুততার সঙ্গে এবং নিরাপদে দেশের প্রতিটি কোণায় কোণায় কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ অসম্ভবের চেয়ে কম কিছু নয়।
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. বারদান জং রানা বলেন, জনগোষ্ঠীর ৬৯ শতাংশকে ইতোমধ্যে পুরো মাত্রায় টিকাদান সম্পন্ন করা বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের যে বৈশ্বিক টার্গেট তা অর্জনের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। কোভ্যাক্সের সহায়তা ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব হতো না। টিকাদানের চলমান গতি আমাদের বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা হিসেবে কোভিড-১৯ এর সমাপ্তি দেখার অনুপ্রেরণা যোগায়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী ৪ থেকে ১০ জুন দেশব্যাপী কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব সব নাগরিক তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করতে পারবেন। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের ৪ মাস পর বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে। এই সাত দিনের যেকোনো দিন নিকটবর্তী টিকাকেন্দ্রে গিয়ে বুস্টার ডোজ গ্রহণ করা যাবে। তাছাড়া সব টিকাকেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য ভ্যাকসিন কার্ডটি অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। বুস্টার ডোজের পাশাপাশি কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস