বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তাবে রাজি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
১ জুন ২০২২ ১৮:১৩
ঢাকা: বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তাবে নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের পর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিও একমত পোষণ করেছে।
বুধবার (১ জুন) দুপুরে বিজয় নগর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ শেষে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এ কথা জানান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দীন স্বপন এ সংলাপে যোগ দেন।
সংলাপ শেষে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আজকের আলোচনায় যুগপৎ আন্দোলনের জন্য মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটাকে আমরা আরও জোরদার কারব। দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাতে চাই, বিরোধী দলের উদ্যোগের সঙ্গে তারা যেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে পাশে দাঁড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমাদের প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা মতবিনিময় হয়েছে। এসময় দেশের পরিস্থিতি আমরা পর্যালোচনা করেছি এবং আমরা একমত হয়েছি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচনের দায় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করতে পারবে না। আমরা একমত হয়েছি, বাংলাদেশের বিদ্যমান যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, বিশেষ করে গত দুইটি জাতীয় নির্বাচনের ব্যর্থতার পরে বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সুযোগ আর নেই।’
‘এই প্রেক্ষাপটে খুব স্পষ্ট করে আমরা বলতে চাই, নির্বাচনের আগেই বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং পদত্যাগ করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করতে হবে এবং পদত্যাগের পর পরই জাতীয় সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে,’— বলেন সাইফুল হক।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, গণআন্দোলন-গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করা না যায়, তাহলে মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, নির্বাচনকালীন তদরকি সরকার বা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন— কোনোটিই নিশ্চিত করা যাবে না।’
‘কেবল দল পরিবর্তন করার জন্য এ আন্দোলন নয়, রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনসহ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, রাষ্ট্র প্রশাসনের সংস্কার, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং রাষ্ট্র যেভাবে নাগরিকদের ওপরে সহিংস ভূমিকায় আবির্ভূত হয় এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে যেভাবে দলীয় বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হয়, এই জায়গাগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি,’— বলেন সাইফুল হক।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার এবং সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। সরকার এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির যে ৩১ দফা, সেটি আমরা বিএনপির নেতাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি। বাংলাদেশে একটি আধুনিক, মানবিক, দায়বদ্ধ সরকারের যাত্রা আমরা শুরু করতে চাই। একটি গতানুগতিক সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে আরেকটি গতানুগতিক সরকার গঠন আমাদের লক্ষ্য নয়। তাই আমরা সামগ্রিকভাবে জগণের যে আকাঙ্ক্ষা, জনগণের যে বিশাল প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশার কাছে গিয়ে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী বাংলাদেশে একটি আধুনিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। অচিরেই এটা নিয়ে আমরা আরও কাজ করব।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে ন্যূনতম ইস্যুতে (ভোটাধিকারের প্রশ্ন, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার) কর্মসূচি দেবো। আমাদের কর্মপরিকল্পনা কিছুদিনের মধ্যে আশা করি শেষ করতে পারব। কারণ, মানুষ দেখতে চায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আছে। মানুষ এই দুঃশাসন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ কার্যকর আন্দোলন দেখতে চায়।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী বর্তমান সরকারের দুঃশাসনে জনগণ অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। জনগণ মুক্তি চায়। সেই অবস্থান থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, সেই উত্তরণ ঘটানোর জন্য প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সাথে আমরা কথা বলব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে কথা বলেছি।’
‘আমরা কতকগুলো মৌলিক বিষয় নিয়ে একমত হয়েছি। বাকি বিষয় নিয়েও অতি দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে পারব বলে মনে করি। আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে, তারেক রহমানকে নির্বাসনে রাখা হয়েছে, ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে আমরা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমরা যদি আন্দোলন শুরু করতে পারি, তাহলে অবশ্যই এই দুঃশাসনের পতন হবে বলে আমরা মনে করি,’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব— এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। পদত্যাগের পর এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, সেই ব্যাপারেও একমত হয়েছি এবং বিলুপ্ত করার পর একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, সে ব্যাপারেও একমত হয়েছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেসব সংস্কারের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আরও আলোচনা করব। অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে যৌথভাবে বক্তব্য নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হব। আজকের সভায় আমরা একমত হয়েছি, আমরা যৌথভাবেই আন্দোলন শুরু করব। নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রথমে শুরু করব। তারপর আন্দোলন যুগপৎ হবে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়েই নির্ধারিত হবে, শেষ পর্যন্ত সেটা কী রূপ নেবে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে অতীতে যেভাবে আন্দোলন সফল হয়েছে, এবারও সেভাবে সফল হবে।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর