নন-কটন রফতানিতে প্রণোদনা চাই
১ জুন ২০২২ ২২:৪৫
ঢাকা: আসন্ন বাজেটে নন-কটন পোশাক রফতানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা চায় বাংলাদেশে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। পোশাক রফতানিতে সরকার যে প্রণোদনা দেয়, তার ওপর ১০ শতাংশ আয়কর (এআইটি) রয়েছে। এই আয়কর যেন না কাটা হয়, সেই প্রস্তাবও সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসেছে। এছাড়া রয়েছে উৎস কর ও করপোরেট কর না বাড়ানোর প্রস্তাব।
আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আগামী ৯ জুন সংসদে উত্থাপন হওয়ার কথা রয়েছে। বাজেট ঘিরে সারাবাংলা ডটনেটের ধারাবাহিক আয়োজন ‘কেমন বাজেট চাই’র এই পর্বে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান তৈরি পোশাক খাতের জন্য বাজেটে বিভিন্ন চাহিদার কথা তুলে ধরেছেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বে নন-কটন গার্মেন্টেসের বড় মার্কেট রয়েছে। এখানে ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হলে আমরা বড় আকারে রফতানি বাড়াতে পারব। প্রণোদনা দেওয়া হলে নন-কটনে আরও বিনিয়োগ বাড়বে এবং এই খাত আরও সম্প্রসারিত হবে। একইসঙ্গ নন-কটনে রফতানি বাড়বে। নতুন বছরের বাজেটে নন-কটন রফতানিতে আমরা তাই ১০ শতাংশ প্রণোদনা চাই।’
আরও পড়ুন- নন-কটনে ‘বিশেষ নজর’ পোশাক মালিকদের
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘রফতানিতে আমরা যে প্রণোদনা পাই, তার ওপর ১০ শতাংশ এআইটি (অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) কাটা হয়। অর্থাৎ আমরা ১০০ টাকা প্রণোদনা পেলে ১০ টাকা কেটে রাখে। এই এআইটি যেন কাটা না হয়, নতুন বাজেটে এটিও আমাদের বড় দাবি।’
পোশাক খাতে করপোরেট ট্যাক্স একই রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাক খাতে যে করপোরেট ট্যাক্স আছে, সেটি কমানোর কথা বলব না। তবে অন্যান্য যেসব কোম্পানি আছে, সেখানে করপোরেট ট্যাক্স কমালে ব্যবসায় গতি আরও বাড়বে।’
অর্থনীতির বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এখন যেকোনো মূল্যে আমাদের রফতানি বাড়াতে হবে। সরকার বিভিন্ন বিলাসদ্রব্য আমদানিতে কর বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ ডলার ও রিজার্ভ নিয়ে সরকার চিন্তিত। অনেক পণ্য আমদানিতে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। কিছু পণ্য আমদানি সরকার কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিচ্ছে। কিন্তু বিধিনিষেধ দিয়ে তো রাষ্ট্র চলতে পারে না। তাই রফতানি কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই চিন্তা করতে হবে। বন্ড ও কাস্টমসে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। কেবল এই হয়রানি বন্ধ করা গেলেও ব্যবসায়ীরা উৎসাহ পাবে, রফতানিও বাড়বে।’
আরও পড়ুন- উৎসে ও করপোরেট কর না বাড়ানোর প্রস্তাব বিজিএমইএ’র
তিনি আরও বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেছে। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভারত নিত্যপণ্য আমদানিতে কর কমিয়েছে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের ওপর যে কর আছে, সরকারের তা কমানো উচিত। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, দেশের রফতানি আরও বাড়ানো দরকার। রফতানি যেন বাড়াতে পারি, সরকারকে সেই চিন্তা মাথায় রেখে নীতি সহায়তা দিতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের জন্য একই নীতি অব্যাহত রাখতে হবে, যেন ব্যবসায়ীরা স্থিতিশীলভাবে ব্যবসা করার সুযোগ পায়। যেমন— সরকার পাঁচ বছরের জন্য নীতি ঘোষণা করতে পারে, যে নীতি আগামী ৫ বছরের মধ্যে আর পরিবর্তন হবে না। এরকম নীতি ব্যবসার জন্য সহায়ক হবে।
এদিকে, পোশাক রফতানির বিপরীতে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তায়তা ক্ষেত্রে আয়কর কর্তন না করার প্রস্তাব দিয়েছে বিজিএমইএ। জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির পক্ষে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- রফতানি সহায়তায় আয়কর না কাটার প্রস্তাব দেবে বিজিএমইএ
রফতানির বিপরীতে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো দশমিক ৫০ শতাংশ হারে উৎসে কর দিয়ে আসছেন। এছাড়া পোশাক শিল্পের জন্য করপোরেট ট্যাক্স হার প্রযোজ্য রয়েছে ১২ শতাংশ। গ্রিন কারখানার জন্য এই করহার কিছুটা কম— ১০ শতাংশ। এসব করহার যেন আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো না হয়, প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরের কাছে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এছাড়াও ছাড়া বেশকিছু এইচএস কোডে পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও করেছে বিজিএমইএ।
এদিকে, বিশ্ববাজারে পোশাকের ফ্যাশনে পরিবর্তন ঘটছে। ম্যান মেড ফাইবারে (নন-কটন) তৈরি পোশাকের দিকে ঝুঁকছে ক্রেতারা। দেশের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরাও এখন এ ধরনের নন-কটনের বাজারে বিশেষ মনযোগ দিতে চান। এ জন্য সরকারের নীতি সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। সে কারণে বাজার সম্প্রসারণে নন-কটন ফাইবার অমাদানিতে থাকা বিদ্যমান শুল্ক উঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে তাদের।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট কেমন বাজেট চাই তৈরি পোশাক খাত ফারুক হাসান বাজেট ২০২২-২৩ বিজিএমইএ বিজিএমইএ সভাপতি