খাস জমি আত্মসাৎ, অভিযুক্ত সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা-দালালরা
২ জুন ২০২২ ০৯:৩২
নড়াইল: জেলার যশোর-নড়াইল-ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক ও নড়াইল পৌরসভারসহ রুপগঞ্জ বাজারের সরকারি খাস খতিয়ানের জমি সেটেলমেন্ট অফিসের চিহ্নিত দালাল মোহাম্মদউল্লাহ, শফিকুর রহমান, যুথিকা রাণী মজুমদারসহ ভূমিদস্যুদের নামে আরএস রেকর্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নড়াইল সেটেলমেন্ট অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা ও ভূমিদস্যুরা যোগসাজস করে সরকারি জমি ব্যক্তির নামে এবং অন্যের জমি নিজের নামে রেকর্ড করানোর অভিযোগ উঠেছে।
নড়াইল সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, হাল (আরএস) রেকর্ডে ৪৬৫ ও ১৫৫ নং খতিয়ানে সাবেক (এসএ) ২৪৮, ২৪৯ ও ২৪৭ নং দাগের সরকারি জমি ভওয়াখালী গ্রামের ইফসুফ মোল্লার ছেলে মোহাম্মদউল্লাহ্ ও কুড়িগ্রামের সন্তোষ কুমার আচার্য্যে কন্যা যুথিকা রাণী মজুমদারসহ ভূমিদস্যুদের নামে রেকর্ড হয়েছে।
নড়াইল পৌর ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম মৌজায় এস এ ২৪৮, ২৪৯ ও ২৪৭ দাগের ৩৩ শতক জমি সরকারি তফসিলভুক্ত ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুন্সী হাফিজুর রহমানের জমি নিজ নামে রেকর্ড করেছেন মোহাম্মদউল্লাহ। মুন্সী হাফিজুর রহমানের ছেলে পলাশ সিদ্দিকী জানান, আমি প্রবাসে থাকি, আমার বাবার বয়স হয়েছে, তিনি বাসাতেই অবসর সময় কাটান। প্রতিনিয়ত জমিজমার বিষয়ে অফিসে গিয়ে খোঁজ-খবর রাখা তার পক্ষে সম্ভব না। এসুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের নামের ৩০ শতক জমি মোহাম্মদউল্লাহ তার নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মোহাম্মদউল্লাহ সেটেলমেন্ট অফিসে দালালি করেন। সেই সুবাদে সেটেলমেন্ট অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহযোগিতায় আমাদের মতো স্বপন কুন্ডুসহ আরও অনেকের জমি তিনি রেকর্ড করে নিয়েছেন।’
কুড়িগ্রামের ভুক্তভোগী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘নড়াইল শহরের ভূমিদস্যুরা জমিদারদের বাজোয়াপ্ত করা জমি দুর্নীতি মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন তাদের বড় বড় আলীশান বাড়ি। চলাফেরা করেন সমাজের অভিজাত শ্রেণিতে।’
এলাকাবাসী জানান, ১৭৯১ সালে নাটোরের রানী ভবানীর রাজ কর্মচারী রূপরাম রায় নড়াইলের জমিদারির পত্তন করেন। রূপরাম রায়ের পুত্র কালী শংকর রায় বর্তমান নড়াইল পৌরসভার কুড়িগ্রাম, নড়াইল, ভাদুলীডাঙ্গা মৌজায় বিশাল অট্টালিকা, নাট মন্দির, বাগান বাড়ি, খেলার মাঠ, পুকুর,বাধাঘাট ও হাতিশালা নির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালে নড়াইলে জমিদাররা দেশ ত্যাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তাদের রেখে যাওয়া অঢেল সম্পত্তি সরকারি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই সময় থেকেই এসব সরকারি জমির ভুয়া কাগজপত্রসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে মালিক বনে যান ভূমিদস্যুরা। যার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাগজপত্র আছে বলে ফোন কেটে বন্ধ করে দেন মোহাম্মদউল্লাহ্। তবে সদর উপজেলার ভূমি অফিসে সহকারি কমিশনার মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘সরকারি খাস খতিয়ানের জমি আমরা রেজিস্টারভুক্ত করে সংরক্ষণ করি। সরকারি খাস খতিয়ানের জমি রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব। সরকারি জমি আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই।’
নড়াইল পৌর ভূমি অফিসের উপ-সহকারি ভূমি কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারি জমির হাল (আরএস) পর্চাসহ অন্য তথ্যের জন্য সেটেলমেন্ট অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত পর্চাসহ অন্য তথ্যগুলো হাতে পায়নি।’
নড়াইল সহকারি সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম হাসান বলেন, ‘আমি রেকর্ড কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে ছিলাম না। এখন শুধু বিতরণ চলছে। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ সময়ে মধ্যে আইনের আওতায় কোনো সুযোগ থাকলে তিনি প্রতিকার পাবেন।’
সারাবাংলা/এনএস