Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘৫ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা পশ্চিমা দেশগুলোর নাগরিকদের সমান’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২২ ১১:৩৬

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে ব্যবসায়ীদের মুনাফা করার প্রবণতার বদলে বরং ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে পণ্য কেনাকে বেশি দায়ী করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ক্রেতারা বেশি দামে পণ্য কিনছে বলেই ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা করার সুযোগ পাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সাড়ে ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর নাগরিকদের সমান। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে বলেই তারা বেশি দামে পণ্য কিনছে। ক্রেতারা বেশি দামে পণ্য কিনলে আমাদের কিছু করার নেই।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২ জুন) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক চা দিবস ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে ৩ কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে রয়েছে। আমি কখনো বলি নাই ১৭ কোটি মানুষের পয়সা বেশি হয়েছে। এদেশে সার্বিক পরিস্থিতির বাস্তবতা হলো ২০ শতাংশ মানুষ বা ৩ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছে। এই ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি বাদ দিলে বাকি ১৪ কোটি মানুষ থাকে। এই ১৪ কোটি মানুষের মধ্যে আবার সাড়ে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপের মতো।’

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বড় ছয়টি কোম্পানি তিন টাকায় প্যাকেট করে প্রতি কেজি চাল ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেছে। যে চাল খোলা বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, একই চাল প্যাকেট করে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এটা ক্রেতারা কেন কিনছেন? এ কারণেই কোম্পানিগুলো বেশি মুনাফা করতে পারছে।

টিপু মুনশি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা লাভ করতে চাইবেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চাইলেই কেন ক্রেতারা বেশি দামে পণ্য কিনবে? আর ক্রেতারা বেশি দামে পণ্য কিনলে আমাদের কিছু করার থাকে না।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশে চালের অভাব নেই। যে পরিমাণ চালের দরকার তা আমাদের রয়েছে। কোথাও কোথাও কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, সেটা আমরা মোকাবিলা করছি।’

তিনি বলেন, ‘যে চাল বাজারে ৫০ টাকা কেজি, সেটা শুধুমাত্র প্যাকেট করেই ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি করছে। পরির্বতনটা হলো তারা কেবল প্যাকেট করছে। প্যাকেট করে তারা বিক্রি করছে। আমার কথা হলো ক্রেতারা তা কিনছেন কেন? ক্রেতারা কিনছে বলেই তারা প্যাকেটজাত চাল বিক্রি করতে পারছে । প্রশ্নটা হল মানুষের অর্থনীতিক অবস্থা ভালো হওয়ার কারণে তারা প্যাকেটজাত চাল খাচ্ছে, ব্যবসায়ীরাও বিক্রি করতে পারছে। ফলে খোলাবাজারে চাল কমেছে এবং প্যাকেটজাত চালের সরবরাহ বেড়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষের কিছুটা বেশি দামে খোলা চাল কিনতে হচ্ছে। অন্যরা প্যাকেটজাত চাল কিনছে।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত সাধারণ মানুষরা এখন মোটা চাল খেতে পারছে না। অথচ আমি রংপুরে খবর নিয়েছি সেখানে মোটা চালের ক্রেতা নেই। সবাই চিকন চাল খাচ্ছেন। যে মোটা চাল মানুষ খাচ্ছে না। সেই মোটা চালই কেটে চিকন চাল করা হচ্ছে। তখন সেটা আবার আমরা বোকার মতো খাচ্ছি। তবে বড় বথা হলো আমাদের চালের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে।’

দেশের বড় ৬টি গ্রুপ যাতে খোলা চাল প্যাকেট করে বিক্রি করতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী- এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিবে কি না, তা জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আইনি অধিকার রয়েছে কি না, সেটাও আমার জানা নেই। আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে সব বিষয়ে আগে আইনি অধিকার রয়েছি কি না এবং আমরা প্যাকেটজাত চাল বন্ধ করনতে পারি কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষেল ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে প্যাকেটজাত চালের দাম বেড়েছে। ক্রেতারা যদি তা না কিনতো তাহলে ব্যবসায়ীরা বাজার পেত না এবং কোম্পানিগুলো এই ব্যবসায় যেত না।’

তিনি বলেন, ‘আপনার পকেটে টাকা আছে। যাওয়ার পথে আপনি ফকিরকে ১০০ টাকা করে দিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কি আমি বাধা দিতে পারি, আপনি কেন ফকিরকে টাকা দিচ্ছেন— আমি কি এই প্রশ্ন করতে পারি? তেমনিভাবে একটা বিএমঢাব্লিউর দাম সাড়ে তিন কোটি টাকা, একটা টয়োটা গাড়ির দাম ৬০ লাখ টাকা। এখন আমি কি কাউকে বলবো— তুমি বিএমডাব্লিউ কিনবে না বা টাকার গরম দেখাবে না? আমরা যেটা পারি তার টাকাটা সঠিক কি না, ঠিকমতো ট্যাক্স দিয়েছে কি না, তা দেখতে পারি। কিন্তু কেউ টাকা খরচ করলে আমরা বাধা দিতে পারি না।

সরকার মানুষকে অপশন দিলে তো বেশি দামে কিনবেই, সরকর কেন মানুষকে এমন অপশন দিচ্ছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমাদের অর্থনীতি অনুযায়ী কেউ বেশি দামে পণ্য কিনে খেলে আমরা বাধা দিতে পারবো না। কারও টাকা থাকলে তিনি বেশি দামে কিনবেন।’

সারাবাংলা/জিএস/এনএস

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর