মে মাসে সড়কে প্রাণহানি এপ্রিলের দ্বিগুণ
২ জুন ২০২২ ১৭:৪৩
ঢাকা: দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে একই সময়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ছয়গুণ মানুষ। গত এপ্রিল মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২৭টি, এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৬৩১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৫৪৩ জনের এর বিপরীতে মে মাসে মৃত্যু হয়েছে ১০২৯ জনের। পরিসংখ্যান বলছে এপ্রিলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল ৪২৭টি তবে গত মাসে দেশে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৬৩১টি।
এপ্রিলে ওই পরিসংখ্যান দিয়েছিল রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোড।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল। এপ্রিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সড়কে নিহত হয়েছিলেন ৫৪৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৬১২ জন। নিহতের মধ্যে শিশু ৮১, নারী ৬৭ জন।
এদিকে সেভ দ্য রোড বৃহস্পতিবার (২ জুন) জানিয়েছে এ বছর ১ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৩১টি সড়কপথ দুর্ঘটনায় দেশে মোট ১০২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায়ই অর্ধেকই শিক্ষার্থী। মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৯৪ জন এবং নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২৯ জন। মৃতদের মধ্যে ৭৭২ জনের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। মৃতদের মধ্যে ৪৪৪ জন শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশের ২৬ টি জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও ইলেকট্রনিক্স চ্যানেলে প্রকাশিত-প্রচারিত তথ্যর পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে সেভ দ্য রোড এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সংগঠনের মহাসচিব শান্তা ফারজানা বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ২৪১ জন নারী, শিশু ৯৭ এবং ৮১ জন ষাটোর্ধ্ব। শিক্ষার্থী এবং তরুণদের অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর কারণে গতি হারিয়ে। অন্যান্য বাহনগুলোতেও প্রায় একই সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে; অর্থাৎ নির্ধারিত গতির চেয়েও অনেক বেশি গতিতে চলার কারণে প্রাইভেট কার, বাস ও ট্রাক দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। এই সব বাহনের অধিকাংশ চালকের বয়সই ১৮ থেকে ৪০-এর মধ্যে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়- দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর পাশাপাশি নিয়ম না মানা এবং হেলমেট ব্যবহারে অনীহার কারণে ১ হাজার ৩৬৭ টি দুর্ঘটনায় আহত ৯৯৪ এবং নিহত হয়েছেন ২৭৫ জন; অসাবধানতা ও ঘুমন্ত চোখে-ক্লান্তিসহ দ্রুত চালানোর কারণে ৮৩২ টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৩৭ এবং নিহত হয়েছেন ১২১ জন; খানাখন্দক, অচল রাস্তা-ঘাট আর সড়কপথ নৈরাজ্যের কারণে ১ হাজার ১১৬ টি বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ১০৬ জন এবং নিহত হয়েছেন ৫২০ জন; পাড়া-মহল্লা-মহাসড়কে অসাবধানতার সঙ্গে চলাচলের কারণে লড়ি-পিকআপ-নসিমন-করিমন-ব্যাটারি চালিত রিক্সা-সাইকেল ও সিএনজি দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ১১৬ টি আহত হয়েছে ৮৫৭ জন এবং ২২২ জন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়াও ১ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪৪টি। এতে আহত ৫২১ জন, নিহত হয়েছেন ২৩ জন; রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১২টি। আহত হয়েছে ২৮৬ জন, নিহত হয়েছেন ২১ জন। আকাশপথে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে ৫৬ জনকে।
এ প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি আলোচ্য তা হলো- ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণদের বেপরোয়া বাহন চালনার কারণে নির্মম মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য মাসের চেয়ে মে মাসে বেড়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের পরিবহনগুলোও পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে কেবল ঢাকা নগরীতে আহত হয়েছেন ২৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে মে মাসেই দুইজন।
সেভ দ্য রোড জানিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এখনই বেপরোয়া বাহন চালানো থেকে চালকদেরকে নিবৃত্ত করতে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা তৈরিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সারাবাংলা/একে