Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের বিদ্যুৎ মিলবে ডিসেম্বরে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২২ ১৮:৪৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। আগামী ডিসেম্বরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো-এইচটিজি।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) সকালে বাঁশখালীর গণ্ডামারায় নির্মাণাধীন ‘এস এস পাওয়ার ওয়ান’ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এসময় প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন এসএস পাওয়ার ওয়ানের সাইট প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

লি জিমিং সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি পাঁচ শতাংশ কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ডিসেম্বরেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। বাংলাদেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই প্রকল্প।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হলেও সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কারণে পরিবেশ দূষণের কোনো সম্ভাবনা নেই। এই প্রযুক্তিতে কম কয়লা পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এই প্রযুক্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠছে।’

২০১৬ সালে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সই হয়। এসময় বিদ্যুৎ কেনাবেচা সংক্রান্ত চুক্তিও সই হয়। ওই বছরই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং।

বিজ্ঞাপন

চুক্তি অনুযায়ী, এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানা থাকছে এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে সেপকো ২০ শতাংশ এবং চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশের মালিক। চুক্তিতে ৪৫ মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সে হিসাবে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় পরে সময় বাড়ানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী পিডিবি ২৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে।

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে এসএস পাওয়ার ওয়ানের সাইট প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের ইঞ্জিয়ারিং প্রগ্রেস ৯৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। প্রকিউরমেন্ট প্রগ্রেস ৯৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং কনস্ট্রাকশন প্রগ্রেস ৯২ দশমিক ২২ শতাংশ। কোভিডকালীনও আমরা রাত-দিন প্রকল্পের কাজ চালু রেখেছি। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজের অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দিতে পারব।’

প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক (মেকানিক্যাল) প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এই প্রকল্পে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর (Electrostatic Precipitator) ও ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (Flue Gas Desulfurization) ব্যাবহার হচ্ছে। এতে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে কাজ করবে।’

বঙ্গোপসাগরের তীরে বাঁশখালীর গণ্ডামারায় ৬০৬ একর জমিতে গড়ে উঠছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুই ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের ১৯৮টি টাওয়ার বসানো হয়েছে। মদুনাঘাট সাব-স্টেশনে যে গ্রিড আছে, সেই গ্রিডে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হবে। সঞ্চালন লাইনটি তৈরি করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমদানিনির্ভর কয়লায় চলবে ‘এসএস পাওয়ার ওয়ান’ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব কয়লা আমদানি হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। তবে প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে প্রকল্পটিতে। এসব কয়লা খালাসের জন্য সাগরতীরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বড় জেটি।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

এস আলম গ্রুপ এসএস পাওয়ার এসএস পাওয়ার ওয়ান চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সেপকো ও এইচটিজি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর