Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দীর্ঘদিন পর দালালমুক্ত বেনাপোল চেকপোস্ট

লোকাল করেসপন্ডেন্ট
৩ জুন ২০২২ ১১:২৪

ছবি: সারাবাংলা

বেনাপোল (যশোর): দীর্ঘদিন পর হলেও বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক কাস্টমস ও পুলিশ ইমিগ্রেশনে দালালমুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই বহিরাগতদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ভারত আসা-যাওয়াকারী পাসপোর্ট যাত্রী হয়রানি বন্ধে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। ফলে পাসপোর্টযাত্রী ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন টার্মিনালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করতে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানিং মেশিন ও সিসি ক্যামেরা। সশস্ত্র আনসার দিয়ে জোরদার করা হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টার্মিনালের প্রধান ফটকে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী, আনসার সদস্য ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখায় প্রবেশ করতে পারছে না পাসপোর্ট দালালেরা। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার মান বৃদ্ধি করায় যাত্রীরা দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছেন নিজেরাই।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় যাত্রীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছে এক লাখ ৪১ হাজার ২১০ জন পাসপোর্টযাত্রী। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৭৭ হাজার ৩২০ জন। আর ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৬৩ হাজার ৮৯০ জন পাসপোর্ট যাত্রী।

কাস্টমস সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল চেকপোস্টে এক শ্রেণির লোক দূরদূরান্ত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। সিরিয়াল ছাড়া তাদের পাসপোর্ট দ্রুত করে দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল ওই চক্রটি। পাসপোর্ট যাত্রীদের পক্ষ থেকে কাস্টমসে অভিযোগ করলে চেকপোস্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। যাত্রীদের সেবার মান উন্নত করতে চেকপোস্ট প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের বহিরাগত দালাল উৎখাতে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। টার্মিনাল এলাকায় বহিরাগত কোনো দালাল ঢুকতে না পারে সেজন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে।

এদিকে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে (বর্ডার কার্গো জিরো পয়েন্টে) বহিরাগত অনুপ্রবেশ বন্ধ ও পাসপোর্টযাত্রীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষে গত ৩১ মে চেকপোস্ট প্যাসেজ্ঞার টার্মিনাল সম্মেলন কক্ষে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া, উপ-কমিশনার অনুপম চাকমা, এইচ এম আহসানুল কবির, আবদুল কাইয়ুম, বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল, উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার, পোর্ট থানার ওসি কামাল হোসেন ভূঁইয়া, চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি মোহাম্মাদ রাজুসহ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানানো হয়, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এলাকায় বহিরাগত কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। পোর্টের লেবাররা তাদের সীমানার মধ্যে যাত্রীদের ব্যাগ বহন করতে পারবেন। কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এলাকায় যাত্রীরা নিজেরাই ট্রলি ব্যবহার করে যাতায়াত করবেন। লেবাররা যাতে পাসপোর্টযাত্রীদের হয়রানি করতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হবে। চেকপোস্টে একটি যাত্রী হেলপ ডেস্ক স্থাপন করা হবে। যাতে যাত্রীরা তাদের যাতায়াতে সর্বত্র সেবা পাবেন। একইসঙ্গে খাবার ও সুপিয় পানি ও পর্যাপ্ত ট্রলির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা যাতায়াতে পাবেন হুইল চেয়ার।

বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ওসি মোহাম্মাদ রাজু জানান, বর্তমানে প্রতিটি যাত্রীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হচ্ছে। যাত্রী সেবা বাড়াতে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ইতোমধ্যে কাউন্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্যানসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা কাউন্টারে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

মূলত বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া যোগদানের পরপরই এ পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়। তিনি জানান, বর্তমানে চেকপোস্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমানে কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়া নিরাপদে যাত্রীরা ভারত যাওয়া-আসা করছেন।

এক্ষেত্রে কোনো ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে কাস্টমসে দালাল প্রবেশের সুযোগ নেই। ঝামেলামুক্তভাবে যাত্রীরা যাতে ভারত যাতায়াত করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া।

সারাবাংলা/এনএস

বেনাপোল চেকপোস্ট যশোর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর