উনি মেয়র পদে না দাঁড়ালে বলত আমার মতো ভালো লোক নেই: সাক্কু
৩ জুন ২০২২ ১৮:২৯
ঢাকা: আসছে ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে চলছে মেয়রপ্রার্থীদের প্রচারণা। নির্বাচনি প্রচারণার দ্বিতীয় দিন থেকেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বিভিন্ন উঠান বৈঠকে সাবেক মেয়র ও এবারও নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়া মনিরুল হক সাক্কুর দিকে ইঙ্গিত করে সিটি করপোরেশনের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে বলে জানান।
এর জবাবে মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, চোর ধরার দায়িত্ব তো আর ওনার না। ৯ বছরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে আমি যদি অন্যায় করে থাকি আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হইত, শোকজ হইত, মামলা হইত। ৯ বছরে কেস খাইলাম না। মেয়র পদে উনি (আরফানুল হক রিফাত) দাঁড়ানোর পরে উনি একটা কথা বলতেছে, এটি তো ঠিক না। যদি তিনি মেয়র পদে না দাঁড়াতেন তবে বলত আমার মতো ভালো লোক আর নেই।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) নিজের প্রচারণা চালানোর সময় এ কথা বলেন মনিরুল হক সাক্কু।
এ দিন নগরীর চৌয়ারা বাজার এলাকায় গণসংযোগে এসে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু তার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ দেন আরফানুল হক রিফাতের প্রতি।
তিনি বলেন, ‘আমি তো ৯ বছর দায়িত্ব পালন করলাম। সিটি করপোরেশনে এত অরাজকতা হয়ে থাকলে মাসে মাসে উনি তদন্তের জন্য লেখতে পারত। স্থানীয় সরকারের কাছে লিখতে পারত, উনি একটা প্রভাবশালী নেতা। ৯ বছর উনি কুমিল্লার নাগরিক। সেই ৯ বছর বললো না কেন?’
তিনি বলেন, ‘উনি নির্বাচনে মেয়র পদে দাঁড়ানোর পড়ে বলতেছে। উনি যদি না দাঁড়াত তাহলে বলতো সাক্কুর মতো ভালো লোক নেই। আমি দাঁড়াইছি উনি দাঁড়াইছে, কে ভালো করবে আল্লাহ জানে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি খারাপ লোক হয়ে থাকি তাহলে ৯ বছরে কেন সরকার আমাকে এই পদে বসিয়ে রাখল। আমার প্রশ্ন উনার কাছে। উনি উনার কথা না বলে, আমি চোর, উনি চোর ধরার দায়িত্ব নিছে, দায়িত্ব নেবে সরকার। আমি যদি চোর হয়ে থাকি অরাজকতা করে থাকি সরকার আমাকে দেখবে।’
আমি আমার কথা জনগণকে বলার জন্য মাঠে নেমেছি। জনগণই জবাব দেবে আমি ভালো করছি না খারাপ করছি। আমার সঙ্গে যে দাঁড়িয়েছে সে আমার সম্পর্কে কী বলল সেটি শোনার সময় আমার নেই— যোগ করেন মনিরুল হক সাক্কু।
প্রচারণার ষষ্ঠ দিন পথসভা, উঠান বৈঠক, পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ, খণ্ড খণ্ড মিছিল আর মাইকিংয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত ছিল বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের কাছে বেড়েছে ভোটারদের কদর। প্রতিটি ওয়ার্ডের ছিল প্রার্থীদের সরব পদচারণা। নিজ নিজ প্রার্থীর প্রচারণা আর স্লোগানে মাইকিং চলছে নগরীতে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা পৌরসভা ও সদর দক্ষিণ পৌরসভার ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আফজল খানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন মনিরুল হক সাক্কু।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ২০১৭ সালের ৩০ মার্চের এই নির্বাচন। বিএনপিসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের কঠোর সমালোচনার মুখে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে কুসিক নির্বাচন করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করার দাবি ছিল নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের নির্বাচন কমিশনের মতো বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সামনেও কুসিক নির্বাচনই প্রথম চ্যালেঞ্জ।
এবার কুমিল্লা সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। সিটিতে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬।
সারাবাংলা/এসবি/একে