সরানো হচ্ছে শহিদ ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতিফলক!
৪ জুন ২০২২ ১০:০৭
রাজশাহী: বাংলাদেশের প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতির এ মহান ব্যক্তিত্বকে পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে গুলি করে এবং বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
শহিদ ড. শামসুজ্জোহাকে যে স্থানে হত্যা করা হয় সেখানে রয়েছে একটি স্মৃতিফলক। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে স্মৃতি বিজড়িত ফলকটি। এখানেই হত্যা করা হয়েছিল শহিদ ড. শামসুজ্জোহাকে। তবে সেই ফলকটি এবার সরানোর চিন্তা করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
‘রাজশাহী নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তালাইমারি মোড় থেকে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত ছয় লেন সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। গত বছর থেকে শুরু হওয়া কাজটি এখন চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪.১০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ চলছে। সড়কের মধ্যে থাকবে দুই মিটারের সড়ক ডিভাইডার। ডিভাইডারের দুই পাশে ১০.৫ মিটারের সড়ক থাকবে। সড়কের উভয়পাশে ৩ মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন ও উভয় পাশের ৩ মিটার ফুটপাত ও ড্রেন থাকবে। সড়কটির সৌন্দর্য বাড়াতে ডিভাইডার ও সড়কের উভয় পাশে গাছ লাগানো হবে।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতিফলকটি সরানোর জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে মৌখিক কথাবার্তা হয়েছে। স্মৃতিফলকটি রাস্তার দক্ষিণ দিকে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতিফলকটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি একটি স্পর্শকাতর। এখনো তারা কোনো লিখিত প্রস্তাব পায়নি। এ বিষয়ে প্রস্তাব পেলে কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অপর পাশেই ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতিফলকের অবস্থান। সেখানে লেখা ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই স্থানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন’।
স্মৃতিফলকের ভেতরে কিছু টবে ফুলের গাছ ছিল। তবে গাছগুলোর সেখানে দেখা মেলেনি। ফলকের দক্ষিণ পাশে রাস্তার বিশাল ড্রেন নির্মাণ শেষে সেটি এখন দৃশ্যমান হয়েছে। কাজ চলছে পাশে ড. শামসুজ্জোহার গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানের স্মৃতিফলকের আশপাশেও।
সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মৌখিক ভাবে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আগামী রবিবারে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আবেদন দেবো। বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবে শহিদ ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতিফলকটি নিজ অর্থায়নে করে দেবো।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘শহিদ ড. শামসুজ্জোহা যে জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেটা একটা ঐতিহাসিক স্থান। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ করছে। তারা মৌখিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে লিখিতভাবে কিছু জানাননি। এ বিষয়ে জানালে তারা এটি নিয়ে কমিটি করবেন। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও