তিস্তা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই: খলীকুজ্জামান
৪ জুন ২০২২ ১৬:০৪
ঢাকা: দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেছেন, বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। তিস্তার কথা আমরা সবাই জানি। সব ঠিক হয়ে গেল। চুক্তিপত্র লেখা হলো। এরপর মমতা ব্যনার্জি বললেন তিনি মানেন না। চুক্তি আর হলো না। মমতা একবার হ্যাঁ বললেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যেত।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই সব বিষয় ভেরি এক্সপার্ট। অথচ অনেক এক্সপার্ট আছেন যারা কিছু্ই বোঝেন না।। তাই আমাদের বন, নদী ভূমিরক্ষার জন্য সামাজিক আন্দোলন করতে হবে।’
শনিবার (৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত গঙ্গা তিস্তা মেঘনা নদীর ব্যবস্থাপনা ও পানির ওপর কৃষক ও আদিবাসীর অধিকার শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। মাহামুদুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় শেখ রোকন, ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বক্তব্য রাখেন।
খলীকুজ্জামান বলেন, “তিস্তা চুক্তি হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা যেটি করতে পারি, যা আছে সেটি নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারি। পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের সংকট নেই। পরিকল্পনা, নীতি এ সব নিয়ে সমস্যা নেই। আমাদের নীতিগুলো দূরদর্শী। আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলন ঠিক জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না। যার ওপর অভিঘাত পড়বে তাদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে হবে না।’
‘২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানি সম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুপক্ষ একমত হয়েছিল। মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়। আমার তো মনে হয় আগে থেকে এটি ঠিক করা ছিল। অঙ্গরাজ্য করবে না, কেন্দ্রীয় রাজ্য করতে চায়, চুক্তি খসড়া করে নিয়ে এসছে। এটি হওয়ার কথা বলে আমার মনে হয় না। আগে ঠিক করে আসা উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়। এ ধরনের ড্রামা আগে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার অবস্থান বদলায়নি। বাংলাদেশের তরফ থেকে এই চুক্তি নিয়ে বারবার বলা হলেও ভারত সবসময় বলছে তারা আশাবাদী।’
গত বছরের মার্চ মাসেও ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশার বাণী শুনিয়ে যান। তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশ্বাসের পাশাপাশি ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে অন্তর্বতী চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশকে ভারত অনুরোধ করেছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন দর্শক সরিতে উপস্থিত থেকে অববাহিকা উন্নয়ন নিয়ে খলীকুজ্জমান আহমদের কাছে জানতে চান। জবাবে খলীকুজ্জমান বলেন, ‘অববাহিকা উন্নয়ন নিয়ে শেখ হাসিনা অনেক চেষ্টা করছেন। মনমোহন সিংয়ের সময়ও কাজ করেছেন। কিন্তু এগোয়নি। আমাদের সব নদী উজানে। ওপারে। অববাহিকতার বড় একটা অংশ সেদিকে। তারা কোনো কাজ করছে না। চীন যখন ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে তখন মাত্র তারা আমাদের কাছে এসেছিল। কারণ তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানের বাস্তব সমস্যাভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা চেয়ে আমার মনে হয়, বর্তমানের সমস্যাকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাঁচ বছরের পরিকল্পনা আমরা করি। কিন্তু কাজ করি বার্ষিক পরিকল্পনা করে। এ জন্য বর্তমানের সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি যেভাবে বাড়ছে যদিও তা অন্য অনেক দেশের কম। তবে এটি সামনে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। মূল্যস্ফীতির কারণে কৃষক-শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমে যাবে। এখানে সামাজিক বেষ্টনী কর্মসূচি বাড়াতে হবে। শুনলাম সেটি বাড়ানো হবে না। কিন্তু যারা দেশের সমমালিক তাদের অর্থনীতির বিধ্বস্ত হয়ে গেলে সমস্যা। এ জন্য ১০ টাকার চালের যে যে আওতা আছে তা বাড়াতে হবে ‘
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে