Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কারাগারে ‘ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী’ গঠন, বের হয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ জুন ২০২২ ১৭:২৭

ঢাকা: সাভার উপজেলার বালিয়ারপুর মহাসড়কে ডাকাতি প্রস্তুতির সময় দুর্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্র ‘ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী’র সর্দারসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সেইসঙ্গে দেশি ও বিদেশি অস্ত্র জব্দ করেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের দাবি, কারাগারে বসে বিভিন্ন অপরাধীর সঙ্গে যোগসাজসে ২৫ জনের একটি বাহিনী গঠন করা হয়। নাম দেওয়া হয় ঠাণ্ডা শামীম বাহিনী। এরপর তারা জামিনে বেরিয়ে ডাকাতচক্র গড়ে তোলে। বিশেষ করে তারা মহাসড়কে ডাকাতি করে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৩ জুন) দিবাগত মধ্যরাতে সাভারের বালিয়ারপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ ডাকাতকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল। শনিবার (৪ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ সব তথ্য জানান।

সাম্প্রতিক মহাসড়কে ডাকাতি বেড়ে গেছে গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে র‌্যাব বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দফতর ও র‌্যাব-৩ এর একটি দল গত রাতে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ১১ জনকে গ্রেফতার করে। ওই ১১ জন হলো- ‘ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী’র মূলহোতা মো. শামিম ওরফে সব্দুল (৩০) তার সহযোগী মো. আনিসুর রহমান ওরফে ঠাণ্ডা (৪৫), মো. সালাউদ্দিন (২৩), মো. ইখতিয়ার উদ্দিন (৩১), মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), মো. জাহাঙ্গীর সরকার (৪০), মো. সজিব ইসলাম (২৫), মো. জীবন সরকার (৩৪), শ্রী স্বপন চন্দ্র রায় (২১), মো. মিনহাজুর ইসলাম (২০) ও শ্রী মাধব চন্দ্র সরকার(২৬)।

গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি পাইপগান, দুটি ওয়ান শুটারগান, ছয় রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি শাবল, রশি, একটি লোহার রড, একটি চাপাতি, দুটি রামদা, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি করাত, একটি হাউজ কাটার, দুটি ছুরি, দুটি টর্চ লাইট, ১১টি ব্যাগ, দুটি হ্যাক্সো ব্লেড, একটি দা, ‍দুটি লেজার লাইট, দুটি প্লাস, একটি দেশি কুড়াল ও একটি হাতুরি উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনীর মূলহোতা শামীম ওরফে সব্দুল এবং তাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড আনিসুর ওরফে ঠাণ্ডা। তাদের নাম অনুসারে উক্ত বাহিনীর নাম রাখা হয় ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী। এই বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর, সড়কে, গাছ কেটে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রীবাহী বাসে, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামে ডাকাতি করে আসছে।

জানা যায়, এই বাহিনীর সদস্যরা অন্ধকারে রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকে। ডাকাতির জন্য পূর্ব পরিকল্পিত নির্ধারিত স্থানের কাছাকাছি স্টেশনে ডাকাত দলের সদস্যরা টার্গেট বাস/ট্রাক/মাইক্রোবাস সম্পর্কে সংকেত দিত। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজরদারি করে মূল ডাকাত দলের কাছে তথ্য সরবরাহ করে। সংকেত পাওয়া মাত্রই গাছ কাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাকাত সদস্যরা দ্রুত গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে দেয়। অন্যদিকে, ডাকাত দলের অপর সদস্যরা বাস/ট্রাক/মাইক্রোবাসের চালক ও যাত্রীদের অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়। যেখানে গাছ কাটার সুযোগ থাকে না সেখানে তারা চালকের চোখে আলো ফেলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাকাতি করে।

এসব ডাকাতির ঘটনায় শামীম ও আনিসুর ওরফে ঠাণ্ডা একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। জেলহাজতে থাকার সময় তাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন অপরাধীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে জামিনে বের হয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে বর্ণিত ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলে। তাদের বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। এছাড়াও, তারা যে এলাকায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে ওই এলাকার স্থানীয় অপরাধী ডাকাত/মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও পরিবহন শ্রমিক/গোডাউনের কর্মচারী/নৈশ প্রহরীদের সঙ্গে যোগসাজশে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে থাকে।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার সালাউদ্দিন ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরে আনিসুর, শামীম ও সালাউদ্দিন একত্রে বসে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে। কোন জায়গায়, কখন কীভাবে ডাকাতি করা হবে, তথ্য সংগ্রহের জন্য কাকে নিয়োগ দিতে হবে, কীভাবে ডাকাতি সম্পন্ন হবে, ডাকাতি মালামাল কোথায়, কখন, কীভাবে পরিবহন, সংরক্ষণ ও কার কাছে বিক্রি করে অর্থ আদায় করা হবে ইত্যাদি পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে।

গ্রেফতার ইখতিয়ার উদ্দিন ওই বাহিনীর অন্যতম সদস্য। সে পেশায় ড্রাইভার। বিভিন্ন সময় ডাকাতির ধরণ অনুযায়ী মিনি ট্রাক/মাইক্রোবাসসহ চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন সরবরাহ করে নিজে চালকের ভূমিকা পালন করে থাকে। ডাকাতির আগে ঘটনাস্থল রেকি, ডাকাতির সময় ও ডাকাতি শেষে ঘটনাস্থল হতে পলায়ন এবং ডাকাতির মালামাল পরিবহনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।

গ্রেফতারকৃত সাইফুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। ডাকাতি করার সময় সে তালা, দেয়াল ও গাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করাসহ ডাকাতির মালামাল বিক্রির দায়িত্ব পালন করে থাকে। মিনহাজুল ও মাধব চন্দ্র তথ্য আদান-প্রদানের কাজ করে থাকে। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনীর যোগাযোগ করিয়ে দেয়। জাহাঙ্গীর পেশায় ইট ভাটার শ্রমিক, সজীব ও জীবন পেশায় গার্মেন্টস শ্রমিক, স্বপন চন্দ্র পরিবহন শ্রমিক। তারা এসব পেশার আড়ালে ডাকাতিও করে থাকে।

গ্রেফতার আনিসুর ওরফে ঠাণ্ডা ২০০৪ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছে। ২০১৬ সালে শামীমের সঙ্গে তার পরিচয়ের সূত্র ধরে একসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতে থাকে। এই বাহিনী ইতোমধ্যে গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল এলাকায় বহু ডাকাতি করেছে বলে জানা যায়। আসামিরা সাম্প্রতিক বগুড়ার শেরপুর এলাকার মহাসড়কে ডাকাতির কথা স্বীকার করে। এছাড়াও, তারা সাভারের হেমায়েতপুরে একটি ব্যাটারির কারখানায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তারা গ্রেফতার হয়।

ডাকাতদলের মূলহোতা শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাতটি এবং আনিসুর বিরুদ্ধে ডাকাতি, মাদক ও বিভিন্ন অপরাধের পাঁচটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী ডাকাতচক্র

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গুলশানে দুইজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫

ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৩

সম্পর্কিত খবর