ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আগামী জন্মবার্ষিকীর আগেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদী ও টঙ্গীখাল দূষণমুক্ত করতে চ্যালেঞ্জ নিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
শনিবার (৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনার সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনের আগেই আমরা নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করব। এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। অনেকেই এটিকে অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন, তবে আমি বলব ৯ মাসে যদি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা যায়, তাহলে আগামী ৯ মাসে আমরা কেন নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে পারব না?’
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নদী দূষণে যদি কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়, তাহলে সেটি হবে ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা শহরে যত মলমূত্র যত আছে, তার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই এই চারটি নদীতে যায়। এটি কিভাবে যায়? ওয়াসার দায়িত্ব ছিল এটি ঠিক করা। রাজধানী থেকে একই পাইপ দিয়ে মলমূত্র, বৃষ্টি পানি ইত্যাদি নদীতে গিয়ে পড়ে। অথচ ওয়াসার দায়িত্ব ছিল টয়লেটের ময়লাসহ পানি এবং গোসলখানাসহ অন্যান্য লাইনের পানি পৃথকভাবে বের হওয়ার ব্যবস্থা করা। সেটি তারা করেনি বরং সবকিছু একই লাইন দিয়ে নদীতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে যার ফলে নদী দ্রুতই দূষণের শিকার হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পানির অপর নাম জীবন। অথচ এখন এই পানিই আমাদের জন্য মরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মার্চ মাসে আমি ঢাকার উত্তরে নদী সফর করেছি, আমি খুঁজেছি কোথায় গেলে আমি এমন একটা নদী পাব, যেখানে মানুষ গোসল করছে। রাজধানী থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সুচিয়া নদী নামে গোসল করার মত একটা নদী পাওয়া গেল। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম সেখানে কিছু মানুষ তাতে গোসল করছে, কেউবা মাছ ধরছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও জানা গেল সেই নদীতে যখন আকিজ ফ্যাক্টরি তাদের বর্জ্য ফেলায় সেটিও দূষিত হয়ে পড়ছে।’
ঢাকার চারপাশ মিলে প্রায় ৪ কোটি মানুষ বসবাস করেন। এই চার কোটি মানুষের জন্য কোনো একটা নদী বা জলাশয় নাই যেখানে কেউ গোসল করতে পারে। এটিও এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকার চারপাশে এ সব নদীতে কোনো ঝিনুক নাই, মাছ নাই, নাই কোনো মাছ রাঙ্গা পাখি বা চিল। এখন নদীতে পাওয়া যাচ্ছে সাকার ফিশ। এ সব নদীতে সাকার ফিশ বাঁচতে পারে তার কারণ তারা পানি থেকে অক্সিজেন নেয় না। জলের ওপরে সাকার ফিশ ৩০ ঘণ্টার বেশি সময়ও বাঁচতে পারে। এ থেকে নদীগুলোর অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে তা সহজেই বুঝা যায়। পরিবেশ দূষণের কারনেই আজকে ডায়েরিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।’
এ সব পানি এখন কলেরার উৎস বলেও মন্তব্য করেন তিনি।