অসচেতনতা-উদাসীনতায় সংকটে পরিবেশ, উত্তরণ শিক্ষা-সদিচ্ছায়
৫ জুন ২০২২ ০৯:৫৭
ঢাকা: বুড়িগঙ্গার দুই তীরে বেড়িবাঁধ থেকে বসিলা পর্যন্ত হাজার বিঘার বেশি জমির ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করত বসিলার কৃষিজীবি সম্প্রদায়। নদীতে নৌকা চালিয়ে ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত আরও কয়েকশ পরিবার। ১৯৯৫ সালের পর থেকে বদলে যায় তাদের জীবন। মাছ ধরে, নৌকা চালিয়ে ও কৃষিকাজ করে স্বাধীনভাবে আত্মসম্মানের সঙ্গে যারা বাঁচতেন, তারাই হয়ে যান হতদরিদ্র। বর্তমানে বসতভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই তাদের। দূষণের ফলে নদীতে নেই মাছ। ফলে এক সময়ের জেলে, মাঝি আর কৃষকরা এখন দিনাতিপাত করছেন দিনমজুর, রিকশাচালক, দারোয়ান, প্রহরী কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে। নারীরা কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে।
বসিলার বাসিন্দা মানিক হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পারিবারিকভাবে কৃষিকাজ ছিল তার পেশা। নদী তীরবর্তী এক ফসলি জমি হারিয়ে এখন সামান্য পুঁজি নিয়ে ইট-বালু-সিমেন্টের ব্যবসা করে কোনোরকমে টিকে আছেন।
কিন্তু ১৯৯৫ সালে কী এমন হয়েছিল যে তাদের এভাবে দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হয়? মানিকসহ স্থানীয়রা জানাচ্ছ্নে, এর আগ পর্যন্ত ট্যানারি বর্জ্য বেড়িবাঁধের ভেতরেই থাকত। কিন্তু ১৯৯৫ সালে বেড়িবাঁধ উপচে দূষিত ট্যানারি বর্জ্য বুড়িগঙ্গা ও আশপাশের খালের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে কৃষি জমিতে। ট্যানারির কেমিকেল-বর্জ্য মিশে দূষিত হয়ে পড়ে নদী ও খালের আশপাশের কৃষি জমি। মারা যেতে শুরু করে ক্ষেতের ফসল ও নদীর মাছ। ফসল ফলাতে না পেরে নামমাত্র দামে জমি বিক্রি করে দিতে শুরু করেন অধিবাসীরা। কেউ কেউ ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেন। কেউ পাড়ি জমান ভিন দেশে। অন্যদিকে নদীর-খালের পানি দূষিত হয়ে পড়ায় পেশা বদলাতে বাধ্য হয় জেলে সম্প্রদায়ও। নদীর ওপর ব্রীজ হওয়ায় নৌকার মাঝিদেরও প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। ফলে ৪০টি জেলে পরিবার থেকে বর্তমানে ১০ থেকে ১২ জনে এসে দাঁড়িয়েছে জেলের সংখ্যা; তারাও বর্ষাকালের হাতেগোনা ক’টা দিনই মাছ ধরতে পারেন। এভাবে নদী দূষণ ও দখলের ফলে কয়েক পুরুষের পেশা হারিয়ে বিপাকে বসিলার সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বাসিন্দা।
দেশের দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় ভিটেমাটি সাগরে তলিয়ে গেলে গৃহহীন হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ। বাধ্য হয়ে দ্বীপ উপজেলা থেকে আশ্রয় নিতে শুরু করেন মূল ভূখণ্ডে। এরকম সাড়ে চার হাজার পরিবার নিয়েই কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে গড়ে ওঠে কুতুবদিয়াপাড়া। ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিটেমাটি হারানো মানুষগুলোর আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে এলাকাটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের আগমন ঘটে ১৯৯১ সালের ভয়াবহ সেই ঘূর্ণিঝড়ের পরে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফাতেমা বেগমসহ এখানকার অধিবাসীরা বলছেন, এখানকার ৮৫ শতাংশ মানুষ পেশায় জেলে। বাকিরা দিনমজুর বা অন্য ছোটখাটো চাকরি করছেন। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকে স্কুল-কলেজে গেলেও আগের প্রজন্মকে সাগরে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয়েছে। যে যতটুকু জায়গা দখল করে রেখেছেন, সেটুকুতেই তাদের ঘরবাড়ি। কিন্তু এসব জমির কোনো দলিল নেই। জমি বিক্রি করতে হলে স্ট্যাম্প করে বিক্রি করেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাছে সরকারি খাস জমিতে বসবাসরত এসব পরিবারকে সম্প্রতি খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। তবে কুতুবদিয়াপাড়ায় মাথা গোঁজার মতো একটু জায়গা ছাড়াও সাগরে মাছ ধরে ও বসতঘরের আশপাশে টুকটাক চাষবাস করার সুযোগ রয়েছে তাদের। অন্যদিকে, খুরুশকুলের আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ফ্ল্যাট ছাড়া আর কিছুই পাবেন না তারা। এ কারণে কুতুবদিয়াপাড়ার অনেকে খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্পে যেতেও রাজি নন।
এভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের কারণে গৃহহীন হয়ে অসহায় হয়ে পড়ছেন হাজারও মানুষ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত কমছে, বাড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলের পানির লবণাক্ততা, বাড়ছে তাপমাত্রা ও মরুকরণ প্রবণতা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া ও সুপেয় পানির অভাবও উপকূলীয় অঞ্চলে প্রকটতর হচ্ছে দিন দিন। একইসঙ্গে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তার তীব্রতা।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে বুড়িগঙ্গার দূষণ— সবই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পরিবেশের সঙ্গে। পরিবেশ দূষণের ফলে নষ্ট হচ্ছে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। এর প্রভাব পড়ছে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর। সম্প্রতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি সমীক্ষাতেও বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বায়ু ও শব্দদূষণে নানা সূচকেই এক নম্বরে রাজধানী ঢাকা। এছাড়াও বায়ুদূষণ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে ২৮ শতাংশ মানুষ পরিবেশ দূষণজনিত অসুস্থতায় মারা যায়। ২০১৫ সালের তথ্য তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক বলছে, কেবল শহরাঞ্চলেই দূষণের কারণে প্রাণ হারান ৮০ হাজার মানুষ। একই প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণের কারণে দেশে বছরে ৬৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়, যা জিডিপির প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ।
পরিবেশ দূষণের এমন ভয়াবহ চিত্র সামনে থাকলেও তা থেকে মুক্তির পথ মিলছে না। বরং ক্রমাগত নানা মাত্রার দূষণের দুষ্টচক্র ছড়িয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক বায়ুদূষণ সূচক একিউআই বলছে, বর্ষাকালে অল্প কয়েকদিন ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বায়ু দূষণ থাকছে বিপজ্জনক মাত্রায়। শীতকালে এটি কখনো কখনো পৌঁছে যাচ্ছে অতি বিপজ্জনক মাত্রায়। তাদের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ২০১৯ ও ২০২০ সালে বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আর এর কারণ হিসেবে উঠে আসে নির্মাণকাজ, যানবাহন, ইটভাটাসহ বিভিন্ন বিষয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে কার্বন বিপর্যয়ের আশঙ্কা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাতারাবাড়িতে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে এটি কর্মক্ষম থাকা পর্যন্ত ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমপরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হবে।
পরিবেশের এমন নানামুখী সংকট যখন ঘিরে ধরছে, ঠিক সেই সময়টিতে পরিবেশগত দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য প্রধান সংকট কোথায়, এমনটিই জানতে চাওয়া হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের কাছে। তারা বলছেন, সব কর্মকাণ্ডের মধ্যে পরিবেশকে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়াটিই বড় একটি সংকট। এছাড়া দেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। পরিবেশ নিয়ে নীতিনির্ধারক ও কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যও যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের দেশ ও ঢাকার দূষণ পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। এর জন্য দূষণকারীরা তো বটেই, যারা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন তারাও দায়ী। ঢাকায় গাড়ির কালো ধোঁয়া বের হলেও কেউ আটকায় না। এটি ব্যবস্থাপনাগত সংকট। এছাড়া পরিবেশ দূষণ রোধে আলাদা বাজেট নেই। দূষণবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোকবল সংকট রয়েছে। সবমিলিয়ে পরস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
দূষণকে চক্রের সঙ্গে তুলনা করে এই ঢাবি শিক্ষক বলেন, জলাশয় ভরাট করে আর গাছ কেটে আমরা বাড়ি বানাচ্ছি। এদিকে গাছ কাটা ও জলাশয় না থাকার কারণে জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গরম বাড়ছে। তার জন্য আমরা আবার এয়ার কন্ডিশনার লাগাচ্ছি। সেই এয়ার কন্ডিশনার বাতাসে কার্বন ছড়াচ্ছে, যা পরিবেশ দূষণ, ওজন স্তরের ক্ষয়ের জন্য দায়ী। অথচ গাছাপালা কার্বন শোষণ করে এবং পানি তাপমাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখত। এভাবে দূষণের একটি দুষ্টচক্রে আটকে আছি আমরা, যার সমাধানে কোনো কার্যকর পদেক্ষেপ নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, দেশে পরিবেশের মূল সংকট ভৌগলিক অবস্থান, ঘনবসতি ও পরিবেশের গুরুত্ব বুঝতে না পারা। পরিবেশের কী পরিস্থিতি, তা জানার জন্য গবেষণা না করেই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। পরিবেশকে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, ততটা গুরুত্ব না দিয়ে প্রকল্প ডিজাইন করা হচ্ছে। দেশ ও দেশের মানুষের 0চেয়ে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে যে মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে, তা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ফলে মানুষ যখন পরিবেশকে উপেক্ষা করছে, পরিবেশ তখন আর মানুষের উপযোগী থাকছে না।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমরা একটি আর্থসামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দিকে এগোচ্ছি। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি এসেছে। এরকম সময় পরিবেশ সংকটের মুখে থাকে। ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতেও এরকম হয়েছে। তবে অনেক দেশই অর্থনৈতিক উন্নয়ন চলাকালে বা এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন পরবর্তী সময়ে পরিবেশগত সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। কয়েক বছর আগে চীনে যেমন ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেওয়ার পর তারা ক্লিন সিটির দিকে ধাবিত হয়েছে। তারা সময়মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল বলেই এখন অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের দেশেও সেরকম শিল্পায়ন, নগরায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে। কিন্তু উন্নয়নে আমরা চীনের পথে হাঁটলেও পরিবেশ রক্ষায় তাদের পথে হাঁটছি না। এটিই আমাদের বড় সংকট বর্তমানে। চীন যেভাবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও দেশীয় প্রযুক্তির সমন্বয়ে পরিবেশগত সমস্যা মোকাবিলা করেছে, আমরা সেখানে যোজন যোজন পিছিয়ে রয়েছি। ফলে আমরা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারছি না— উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ হলে আমরা আবার পরিবেশকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারব।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কী করণীয়— জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুস সালামের অভিমত, পরিবেশকে তার নিজের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, মানুষকে বোঝাতে হবে। মানুষকে পরিবেশ বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে। সবেচেয়ে জরুরি আইনের প্রয়োগ ও সদিচ্ছা। এসবের মাধ্যমে পরিবেশকে নিজের মতো করে থাকতে দিতে হবে।
বাপা’র শরীফ জামিল মনে করছেন, পরিবেশ রক্ষায় সবার আগে নীতিনির্ধারণী মহলের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনি বলেন, যারা নীতিনির্ধারণ করছেন, তাদের বুঝতে হবে— পরিবেশ রক্ষা না করতে পারলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। তাই পরিবেশকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহারে মনোযোগী হওয়ার মধ্যে সংকট সমাধানের পথ দেখছেন অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, পরিবেশ সংকট সমাধানে দুইভাবে এগোনো যায়— ইনসিটো বা স্থানিক সমাধান এবং এক্সিটো বা বাইরের সমাধান। আমরা এক্সিটোর দিকে যাচ্ছি। অর্থাৎ বাইরের পরামর্শের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার স্থানিক সমাধান চান। অর্থাৎ দেশীয় প্রযুক্তি ও পরামর্শ কাজে লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষাকে গুরুত্ব দেন, ঠিক যেভাবে চীন সফল হয়েছে। আমরা নিজেরা না করে অন্যের ওপর নির্ভর করছি দেখেই সংকট অনেক গভীর।
পরিবেশ বিষয়ে সব মহল থেকেই শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবকেই আমাদের পরিবেশগত মূল সংকট হিসেবে দেখছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দীন। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারক— সব স্তরের মানুষের মধ্যে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার মধ্যেই সংকটের সমাধান দেখছেন তিনি।
অধ্যাপক মহিউদ্দীন বলেন, মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়বে— এটিই স্বাভাবিক। সেই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে পরিবেশও সংকটের মুখে পড়ছে। কিন্তু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী পর্যায়ে পরিবেশ রক্ষায় কোনো উদ্বেগ বা সচেতনতা নেই বললেই চলে। অথচ নিয়মতান্ত্রিকতা অনুসরণ করতে পারলে পরিবেশ রক্ষা করেও উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো সম্ভব। এই সচেতনতাটুকুই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সবাই যদি এগিয়ে আসে, যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা রাখে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দূষণ থেকে বিরত থাকে— তাহলেই পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জলবায়ু পরিবর্তন পরিবেশ দূষণ পরিবেশ বিপর্যয় পরিবেশ সংকট পরিবেশগত সংকট