নেচার বেইজড সল্যুশন নীতি বাস্তবায়নের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
৫ জুন ২০২২ ১৫:১৫
ঢাকা: পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে নেচার বেইজড সল্যুশন নীতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৫ জুন) জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২২-এর উদ্বোধন ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২২-এর উদ্বোধন করেন।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অনলি ওয়ান আর্থ : লিভিং সাস্টেইনেবিলি ইন হারমনি উইথ নেচার’ অর্থাৎ ‘একটাই পৃথিবী : প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন।’ এদিকে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে পরিবেশ রক্ষায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তার সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এ সব কর্মসূচির ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ২২দশমিক ৫০ ভাগ বনায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিই, আমাদের শর্ত থাকে কোথাও একটি বৃক্ষ নিধন হলে অন্তত ৫ গুণ বৃক্ষ যেন রোপণ করা হয়। আমরা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের বেলায় এই নীতিটি মেনে চলছি। আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ যেন উন্নত জীবনযাপন পায় তারা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে, তাদের জীবনমান যাতে উন্নত হয় সেটিও আমাদের করতে হবে।’
পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন করা না হলে সেটি কখনও টেকসই হয় না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নেচার বেইজড সল্যুশনের দিকে ধাবিত হতে হবে। যে কোনো প্রতিষ্ঠান যাই তৈরি হোক কেন, কারণ আমাদের তো ডেভলপমেন্ট করতেই হবে। কিন্তু সেটি যেন নেচার বেইজড সল্যুশন এই নীতিটা মেনে চলা দরকার। সেদিকে লক্ষ রাখা একান্তভাবে দরকার।’
পরিবেশ অধিদফতরের আরও শক্তিশালী করার জন্য পরিবেশ অধিদফতরের জনবল ২৬৫ থেকে ১ হাজার ১৩৩ উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে ৫০টি জেলায় পরিবেশ অধিদফতরের অফিস স্থাপন করা হয়েছে এবং বাকি জেলাগুলোতে অফিস স্থাপন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কথা আসছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখি না বা আমরা কোনো ক্ষতি সাধন করি না। কিন্তু সারাবিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলো নিজেদের উন্নয়ন তারা করে ফেলেছে। কিন্তু তারাই বিশ্বে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে গেছে।’
আমরা বাংলাদেশ সব সময় এব্যাপারে সচেতন এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে সবথেকে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। কাজেই এখানে বনায়ন সংরক্ষণ একটা কঠিন কাজ। আপনারা জানেন যে আমাদের দেশে প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি উখিয়ায়। আমার ছোট বেলায় দেখা এই উখিয়ায় বাঘের ডাকও শোনা যেত। হাতির পায়ের ছাপ দেখা যেত। কিন্তু এখন আর সেই বনের কোনো অস্তিত্ব নেই। যেটুকু ছিল রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে পরিবেশটা নষ্ট হয়ে গেছে।’
বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আমাদের নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও কিন্তু মুক্তি পাবে, লবণাক্ততা থেকেও মুক্তি পাবে এবং আমাদের মৎস্য সম্পদ বা জলজ সম্পদ সেটাও বৃদ্ধি পাবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। এরপর এসেছে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার ফলে যে সমস্ত খাদ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। আমদানি ভাড়া অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য পাওয়াটাও একটা কষ্টকর হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জমি উর্বর, আমাদের জমি আছে। আমাদের নিজের ফসল ফলাতে হবে। আমাদের নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করতে হবে। এতে আমাদের প্রকৃতি পরিবেশও রক্ষা পাবে। পাশাপাশি আমরা পরনির্ভরশীলতাও কাটিয়ে উঠতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এরইমধ্যে আমাদের বন ২২ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি। এটি ১৯৯৬ সালে ১১ ভাগ পেয়েছিলাম। বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার ফলে আজকে তা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন , উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে