বিস্ফোরণে দগ্ধ ১৪ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে, একজন ঢামেক হাসপাতালে
৬ জুন ২০২২ ১১:৪৬
ঢাকা: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৪জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া রাসেল (৪২) নামে একজনের বুকে ব্যথা পাওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। দগ্ধদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের দুইজন সদস্য আছেন।
রোববার (৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে রাত পর্যন্ত তাদের অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
দগ্ধরা হলেন সিকিউরিটি ইনচার্জ মাগফারুল ইসলাম (৬৫) প্রশাসনিক কর্মকর্তা খালেদুর রহমান (৬০), শিল্পাঞ্চল থানার এসআই কামরুল ইসলাম (৩৭), ইমপোর্ট সুপারভাইজার শেখ মইনুল হক চৌধুরী (৪১), লেবার আমিন (২২), কনটেইনার চালক মো. ফারুক (৪৭), রিসিভার ফরমানুল (৩২), ইঞ্জিনিয়ার মাসুম মিয়া (৩২), চালক মহিবুল্লাহ (২৭), লেবার ফারুক হোসেন (১৬), চালক রুবেল মিয়া (৩৪) নজরুল ইসলাম (৩৭) ফায়ার ফাইটার রবিন মিয়া (২২), ও গাউছুল আজম (২২)।
এর মধ্যে ৮ জন রোগীকে চট্টগ্রাম থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং বাকি ৭ জনকে সেনাবাহিনীর হেলিকপটারে আনা হয়।
মাগফারুলের ভাই আসাদুল হক জানান, সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে চাকরি করেন মাগফারুল। থাকেন ডিপোর ভিতরেই কোয়ার্টারে। রাতে বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এরপর সকালে তাকে সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তার হাত-পা সহ শরীর বেশ কিছু অংশ দগ্ধ হয়েছে।
খালেদুর রহমানের মেয়ের জামাই মিনহাজুর রহমান জানান, বিএম ডিপোতে অ্যাডমিনে চাকরি করেন খালেদুর। পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামের মোজাফ্ফর নগর।
কামরুলের খালাতো ভাই নেয়ামত উল্লাহ জিসান জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে ফোর্স নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তখন বিস্ফোরণে তিনিও দগ্ধ হন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে, পরে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়।
আমিনের সহকর্মী মো. সেলিম রেজা জানান, আমিরের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। কনটেইনার ডিপোতে লেবারের কাজ করে। ঘটনার দিন রাত ১১টায় তাদের ডিউটি করার কথা ছিল। ডিউটিতে যাওয়ার আগে মোবাইলের টাকা লোড করতে যাচ্ছিল আমিন। তখনই বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়।
রাসেলের ভাই মো রবিউল ইসলাম জানান, রাসেল ও ফারুক নারায়ণগঞ্জ প্রাইম কালচার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কনটেইনার গাড়ি চালক। গতকাল মোট ৫টি কনটেইনার গাড়িতে গার্মেন্টসের মালামাল নিয়ে সীতাকুণ্ডের ওই ডিপোতে গিয়েছিল। আগুন লাগার পর তারা সেখান থেকে আনুমানিক আধা কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছিল। তখন আবার বিস্ফোরণ হলে তারা ছিটকে পড়ে। তখন ডিপোর বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে তাদেরকে বের করা হয়। এ সময় ফারুক দগ্ধ হলেও রাসেল বুকে আঘাত পায়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন জানান, মাকফারুল ইসলাম ও খালেদুরের শরীরের ১২ শতাংশ, কামরুলের ৪ শতাংশ, মইনুলের ১৮ শতাংশ, আমিনের ৫ শতাংশ, ফারুকের ৫ শতাংশ, ফরমানুলের ৩০ শতাংশ, মাসুমের ৪ শতাংশ, রবিনের ৬০ শতাংশ, মহিবুল্লার ১০ শতাংশ, ফারুকের ১২ শতাংশ, গাউছুল আজমের ৭০ শতাংশ ও রুবেলের ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে রাসেলের বুকে আঘাত পাওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ডা.সামন্ত বলেন, ‘ভর্তি তিনজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বাকিদেরও আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তাদের ইনহেলেশন বার্ন রয়েছে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে আমরা গত রাত থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি। আমাদের চিকিৎসকের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা মেডিকেল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে।’
ডা.সামন্ত বলেন, ‘আজ ভোরে আমি ও ইনস্টিটিউটের তিনজন চিকিৎসক এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পিএস বিপ্লব বড়ুয়া চট্রগ্রাম মেডিকেলে এসেছি। এখানকার চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত পরে জানাব।’
সারাবাংলা/এসএসআর/একে
সারাবাংলা/এসএসআর/একে