ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন সংক্রান্তে আদেশের জন্য আগামী ১২ জুন ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার (৬ জুন) শুনানি শেষে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান আদেশের জন্য এ দিন ঠিক করেন।
এদিকে শুনানিকালে এ মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম দাবি করেছেন শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি হিসেবে নয়, সারাজীবনে তিনি কোনো অপরাধ করেনি। এক টাকাও কারও কাছ থেকে গ্রহণ করেননি।
আদালতের অনুমতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রথমে বলব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক থাকাকালীন শুধু নয়, সারাজীবন আমি কোনো অপরাধ করিনি। বাংলাদেশের স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রথম সংগঠন ও চক্ষুব্যাংক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতার আমি একজন। সেই থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাজ ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। আমি মহাপরিচালক থাকার পর আমার ভাই-বউ, আত্মীয় স্বজনদের অফিসে আসতে দিইনি। মোবাইলে সিম চেঞ্জ করে আননোন নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলাম। আত্মীয় স্বজনরা আমাকে ফোনে পেতেন না। জীবনে কারও কাছ থেকে এক টাকাও নিইনি। পেতো না। এই কঠিন সতর্কতা অবলম্বনের পরেও আজ আমি আপনার সামনে আসামি হিসাবে গণ্য হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২০ সালের কোভিড পরিস্থিতি কেমন ছিল তা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কোভিডের সময় যে কেউ জানত বাংলাদেশের কী অবস্থা হতে পারত। উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারলে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষ আক্রান্ত হতেন, ৬ লাখ মানুষ মারা যেত। যদি সর্বোচ্চ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে না পারি, মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে ৪ লাখ মানুষ মারা যেতে পারত। এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে, কী ধরনের কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে।’
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার একটি কিডনি নেই। আমি ডায়াবেটিস রোগী। কোভিডের সময় কিডনির যত্নও নিতে পারিনি। এই মামলার কারণে সারাক্ষণ আমার মন খারাপ থাকে। সবকিছু থেকে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। অথচ দেশকে আমি অনেক কিছু দিতে পারতাম। আমার পরিবার আত্মীয় স্বজনের কথা ভবলে আমার খুব কষ্ট হয়। সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সারাজীবন ওদের বঞ্চিত করেছি। মামলায় আমার নাম ছিলো না, কিন্তু হঠাৎ চার্জশিটে নাম এসেছে।’
মামলার অপর ৫ আসামি হলেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ডা. আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক ডা. মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে সাহেদ করিম কারাগারে আছেন। এদিন তাকেও আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা আবুল কালাম আজাদসহ পাঁচ আসামি আদালতে হাজিরা দেন।