Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঋণ ও বিল খেলাপি বিষয়ে ইসির সঙ্গে একমত নন ব্যাংকাররা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জুন ২০২২ ২০:৫৯

ঢাকা: ভোটে অযোগ্য করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকাভুক্ত নয়, শুধু মামলা থাকলেই প্রার্থী হতে পারবে না— নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নন ব্যাংকার ও সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

সোমবার (৬ জুন) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ব্যাংক, সেবা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষকসহ ১৪ জনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন।

বিজ্ঞাপন

সভায় ঋণ ও বিল খেলাপিদের ভোটে আটকাতে শুধু মামলাকে প্রধান্য দিতে চেয়েছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তাতে সম্মতি দেয়নি ব্যাংক ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবি তালিকাভুক্ত হলেই খেলাপি হিসেবে ভোটে অযোগ্য থাকবেন। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিধানই বহাল রাখতে হবে।

ঋণ ও বিল খেলাপিদের ‘ছাড়’ দেওয়া নিয়ে আইনি সংস্কার বিষয়ে এই সভা হয়। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ছাড়াও ৪ নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশই বলেছেন, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে এখন যে বিধান রয়েছে তা থাকলেই ভালো হয়। আমরা যেটা প্রস্তাব করেছিলাম- এটাতে উনারা খুব কমফোর্টেবল ফিল করেন না।’ ‘আরপিও সংশোধন করা হবে কিনা’ তা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

জানা গেছে, আরপিও অনুযায়ী, ঋণ ও বিল খেলাপিরা সংসদ নির্বাচনের ভোটে অযোগ্য। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার নির্ধারিত সময়ে পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সিআইবি প্রতিবেদনে যারা খেলাপি হন তারা আর অংশ নিতে পারেন না। কমিশন প্রস্তাব দিয়েছিল, সিআইবি প্রতিবেদন নয়, শুধু মামলা হলেই তাকে ভোটে অযোগ্য করার বিধান করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

সভায় সিইসি বলেন, ‘ব্যাংকের ঋণ কিভাবে আদায় করতে হবে তা ব্যাংকের ইন্টারনাল বিষয়, তাদের নির্ধারণ করতে হবে। বিল কিভাবে আদায় হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় যারা শক্তিশালী, ঋণ খেলাপি ও বিল খেলাপি হয়ে তারা পরিশোধ না করেও পারবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য জটিল হয়।’

সিইসি জানান, বর্তমান বিধানে সত্যিকারেরর যারা খেলাপি নন, তারাও অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার মৌলিক অধিকার। তাতে যেন কোনোভাবে, কারও অধিকার খর্ব না করার জন্য ভিন্ন চিন্তা করেছে ইসি।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনের সাবেক ছাত্র সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা একটা প্রস্তাব করেছিলাম, স্পিরিটটাকে স্পষ্ট করার জন্য। ঋণ ও বিল আদায়ের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে কোর্টে, তাদের আমরা গণ্য করবো ঋণখেলাপি হিসেবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-টেলিফোন বিল নিয়ে বাহুল্য মনে হয়েছিল কমিশনের। বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়া যায়। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, তবেই বিল খেলাপি বলতে চাই।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা একটা ড্রাফট করেছিলাম। যারা জেনুইন ডিফল্টার, সত্যি সত্যি টাকা লুট করার জন্য যারা ঋণ পরিশোধ করছেন না (তারা যেনো অযোগ্য হন), …ব্যাংকাররা বলছেন, যেকোনো খেলাপিই সিরিয়াস ডিফল্টার। কিন্তু আমরা দেখতে চেয়েছিলাম একটু ভিন্নভাবে।’

তিনি জানান, সভায় ব্যাংকাররা আগের বিধানেই কমফোর্টেবল বলছেন। সিআইবি থেকে যে তালিকা সরবরাহ করা হয়, তার ভিত্তিতে খেলাপি নির্ধারিত হয়ে থাকে। মামলা করার বিষয়টি যুক্ত করতে চাইলে তাদের আপত্তি নেই।

সভায় পূবালী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানজার দেওয়ান রুহুল আহসান বলেন, ‘আমরা ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিআইবি রিপোর্টকে প্রাধান্য দিতে বলেছি। সেই সঙ্গে প্রচলিত আইন যদি সংশোধন করতে চায় তাহলে ওই অংশটি (মামলা) যুক্ত করতে পারে। সবার মতামতের নিয়ে প্রয়োজনে আরও পর্যালোচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’

ইসির প্রস্তাবে ব্যাংকরারা রাজি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অবজারভেশন দিয়েছি। সিআইবিতে যা আছে, তা থাকবে। মামলার পাশাপাশি বিদ্যমান বিধানও রাখতে হবে।’

ডেসকোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার রশিদুর রহমান জানান, বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধানে তাদের সম্মতি নেই। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধানই বহাল রাখার পক্ষে তারা মতামত দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ না করলেই বিল খেলাপি হয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি গ্রাহককে জানানো হয়। কিন্তু মামলা করতে গেলে সেবা প্রতিষ্ঠানের নানা ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘ইসির প্রস্তাবের পর আমাদের মতামত জানিয়েছি। রাখবেন কি রাখবেন না, তা তাদের বিষয়। বিদ্যমান আইনই থাকুক। মামলায় আমাদের সম্মতি ছিল না।’

এছাড়াও বৈঠকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়েরর অতিরিক্ত সচিব (ড্রাফটিং) হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিন ডক্টর সীমা জামান, ডেসকো’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার রশিদুর রহমান, ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজিজুল হক পান্না, আইন ও বিচার বিভাগের উপ সচিব প্রশাসন (জেলা জজ) শেখ গোলাম মাহবুব, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (বি আর পি ডি) মাকসুদা বেগম, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে’র জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল কদ্দুস, বিটিসিএল’র জেনারেল ম্যানেজার (ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) মাজহারুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্পেশাল এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (ডিভিশনাল হেড) মীর ইকবাল হোসেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি হেড নুর হোসাইন আল কাদেরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব (বাজেট) ফারুকুজ্জামান, তিতাস গ্যাস লিমিটেডের পরিচালক (অর্থ) অর্পণা ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/জিএস/এমও

ইসি ঋণ খেলাপি নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ভবন বিল খেলাপি

বিজ্ঞাপন

ভরি ছাড়াল ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০২:২৫

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর