Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মহিউদ্দিনের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে’


১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:০৯

সারাবাংলা ডেস্ক

দীর্ঘ অসুস্থতার পর চলে গেলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ৭৪ বছরের জীবনে মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন ১৬ বছর। একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রয়াত এই নেতার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন, শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানিয়েছেন সমবেদনা। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চট্টগ্রামের মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মহিউদ্দিনের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত মহিউদ্দিনকে গত মাসে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। এ মাসে তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার একটু উন্নতি হলে ঢাকা থেকে দু’দিন আগে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল চট্টগ্রামে। কিন্তু সেই উন্নতি স্থায়ী হয়নি জানান তার বড় ছেলে আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় বলে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী জানান। নওফেল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর রাত ৩টার পর তার বাবার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানানো হয়।

হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের নওফেল বলেন, চট্টগ্রামবাসীর কাছে প্রিয় মানুষ ছিলেন আমার বাবা। ঢাকায় একটু সুস্থ হওয়ার পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে আনার পর তার কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। প্রথমে আইসিইউতে নিলেও পরে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এক পর্যায়ে আর কোনো সাড়া না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। হাসপাতালে অনেককেই চোখ মুছতে দেখা যায়। এই আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন হাসপাতালে। সকালে মহিউদ্দিনের মরদেহ নগরীর ষোলশহর এলাকায় তার চশমা হিলের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও নেতাকর্মীরা ভিড় করেন শেষবার তাকে দেখতে।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল সেখানে বলেন, আমরা একজন মহান নেতাকে হারিয়েছি। চট্টগ্রাম হারিয়েছে তার অভিভাবককে।

মহিউদ্দিনের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরা গ্রামের বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে। বাবা রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম। ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া মহিউদ্দিন ১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরে আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ করেননি। জড়িয়ে পড়েন ছাত্র আন্দোলনে। ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান ভারতে। উত্তর প্রদেশের তান্ডুয়া সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্কোয়াডের কমান্ডার নিযুক্ত হন মহিউদ্দিন। সম্মুখ সমরের যোদ্ধা মহিউদ্দিন স্বাধীনতার পর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পান। পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে মহিউদ্দিন গঠন করেন ‘মুজিব বাহিনী’। সে সময় ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হলে তিনি পালিয়ে কলকাতায় চলে যান। এরপর ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন বলে আত্মজীবনীতে উল্লেখ করে গেছেন এই রাজনীতিবিদ।

পরের পাতায় পড়ুন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর