‘সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় হত্যার অভিযোগে ট্রায়াল হওয়া উচিত’
৭ জুন ২০২২ ১৮:২৯
ঢাকা: সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ নিয়ে আসা উচিত। দেশের মানুষ চায়, হত্যার অভিযোগে তাদের ট্রায়াল হওয়া উচিত।
মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএম কনটেইনার ডিপোর লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য সরকারের অবহেলা, সমন্বয়হীনতা ও অযোগ্যতা দায়ী। সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি, অযোগ্যতা, জবাবদিহিহীনতার কারণেই এতগুলো প্রাণ চলে গেল এবং সামগ্রিক ক্ষতি হলো।’
তিনি বলেন, ‘কনটেইনার ডিপো যেটা তৈরি করা হয়েছে তার কিছু রুলস-রেগুলেশন আছে। সরকারের কনট্রোলিং অথোরিটি আছে যারা এসব নিয়ন্ত্রণ করবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এগুলো কেউ মনিটরিং করে না। যাদের দায়িত্ব আছে সমন্বয় করার, তারা ঠিক মতো পালন করছে না। যে করণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।’
সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। পার্লামেন্টে তাদের জবাব দিতে হয় না। যে কারণে বল্গাহীনভাবে যা ইচ্ছা করে চলেছে। তাদের সঙ্গে যারা আছে, যারা মদদপুষ্ট- তারাও কিন্তু সরকারের কাছে কোনো জবাব দেয় না। এটাই মূল কথা।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কাজ করছে না, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কেউ কারও কাছে জবাবদিহী করে না। যার যা খুশি করে চলেছে। তাই আজ এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।’
বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবার ও অগ্নিদগ্ধদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
সরকার দুঃস্বপ্ন দেখছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি মুহূর্তে দুঃস্বপ্ন দেখছে। দুঃস্বপ্ন দেখছে যে, তাদের ক্ষমতা চলে যাচ্ছে। জনগণ তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সেজন্য তারা নানা মিথ্যাচার করছে।’
তিনি বলেন, “সাবেক প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের লেখা একটি বইকে উদ্ধৃত করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোতিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যাচার ছড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তার আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো যে, প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ‘অ্যাট বঙ্গভবন: লাস্ট ফেজ’ নামে ইংরেজিতে লেখা বইটির কোথাও ‘অস্ত্রের মুখে জিয়া রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন’ এমন কথা উল্লেখ নেই। অথচ এরকম মিথ্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রসহ আওয়ামী লীগের অনেকেই।’
“আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম এএফপি বিষয়টির ফ্যাক্ট চেক করে সোমবার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তথ্যপ্রমাণসহ উঠে এসেছে যে, শহিদ জিয়াকে নিয়ে খবর প্রকাশের বিষয়টি ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যাচার আর ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে তার উত্তরসূরি জিয়াউর রহমান জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন’- এমন একটি তথ্য বিকৃত করে অবাধে ফেসবুকে ছড়ানো হয়। মূল ইংরেজি বইয়ে জিয়া সম্পর্কে এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয়টি সাজানো বলে তথ্য পেয়েছে এএফপি। বইটির বাংলা অনুবাদক নিজেও এএফপিকে জানিয়েছে ফেসবুকে এ নিয়ে যা ছড়ানো হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। আমরা এহেন বিকৃতি তথ্য ছড়ানোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য এএফপিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি”- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রখ্যাত মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র নিবন্ধন প্রধানমন্ত্রীর এনজিওবিষয়ক ব্যুরো কর্তৃক বাতিল করায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে, সরকারের এই পদক্ষেপ মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগকে ব্যাহত করবে। সরকারের মানবাধিকারের লঙ্ঘনের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাবে।’ গুম, বেআইনি আটক, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম