Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মহিউদ্দিনের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে’


১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:১০

আগের পাতায় পড়ুন

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মহিউদ্দিন চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদে ছিলেন। চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক অর্জন থাকলেও কখনও সংসদ সদস্য হতে পারেননি মহিউদ্দিন। ১৯৮৬ সালে রাউজান থেকে এবং ১৯৯১ সালে নগরীর কোতোয়ালি আসনে ভোট করে তিনি হেরে যান। তবে ১৯৯৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী হয়েই মহিউদ্দিন বিজয়ী হন। ২০০০ সালে দ্বিতীয় দফায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০০৫ সালে তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তার মেয়াদে পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ‘অনন্য দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করেছিল বলে অনেকে মনে করেন। বন্দর নগরীর ষোলশহর এলাকায় তার বাসার গলিটি চট্টগ্রামবাসীর কাছে ‘মেয়র গলি’ হিসেবেই পরিচিত। প্রায় দুই যুগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার পর ২০০৬ সালের ২৭ জুন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন মহিউদ্দিন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।

তার বড় ছেলে মুহিবুল হাসান নওফেলকে গতবছর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করে নেওয়া হয়। ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন করেন ব্যবসা। মহিউদ্দিনের ছয় ছেলে মেয়ের মধ্যে ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পা ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর ক্যান্সারে মারা যান। বাকি তিন মেয়ের মধ্যে জেবুন্নেসা চৌধুরী লিজা গৃহিনী। যমজ বোন নুসরাত শারমিন পিয়া ও ইসরাত শারমিন পাপিয়া মালয়েশিয়া থেকে এমবিএ করেছেন।

বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য সারাদেশে পরিচিতি পেলেও মহিউদ্দিন সব সময় নিজেকে চট্টগ্রামের রাজনীতির গতিতেই ধরে রেখেছেন। গতবছর ডিসেম্বরে জন্মদিনে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাবে তিনি বলেন, টিল ডেথ, আই উইল ডু ফর দ্য পিপল অব চিটাগং, চট্টগ্রামের মানুষকে আমি ভালোবাসী।

অনেকের কাছে মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন রাজনৈতিক গুরু, কারো সহযোদ্ধা, কারো নেতা, আবার কারো কাছে ছিলেন অভিভাবক। কেবল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নন, ভিড়ের মধ্যে দেখা গেলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, রিকশা চালক-সব শ্রেণি পেশার মানুষকেই। চশমা হিলের যে রাস্তায় তার বাসা, তাকে মানুষ চেনে ‘মেয়র গলি’ নামে। খোরশেদ নামের এক রিকশাচালক ছুটে এসেছিলেন বায়েজিদ বোস্তামি থেকে। তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর মত নেতা আর হবে না। তিনি আমাদের মত গরিবদেরও ভালোবাসতেন।

প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুর খবরে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন উনাকে মন্ত্রী করতে, চেয়েছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য করতে। কিন্তু মহিউদ্দিন ভাই রাজি হননি। চট্টগ্রাম ছেড়ে গিয়ে তিনি কিছুই চাননি।

শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নন, রাজনীতির মাঠের প্রতিপক্ষের নেতারাও ছুটে এসেছেন মহিউদ্দিনের কফিনের পাশে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনীতিতে আমাদের দ্বিমত ছিল, কিন্তু হৃদ্যতা ছিল সবসময়। এরকম নেতা আর হবে না। তার অবস্থান ছিল রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিপরীতে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ ও এনামুল হক শামীম, চট্টগ্রামের সাংসদ আফসারুল আমীন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ ছালাম, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীও মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় এসেছিলেন তাকে শেষবার দেখতে।

শুক্রবার বিকেলে (বাদ আসর) লালদীঘি ময়দানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নামে। জানাজায় অংশ নেন- ওবায়দুল কাদের, ড. হাসান মাহমুদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। লালদীঘি ময়দানে জানাজায় আরও অংশ নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ভক্ত-অনুরাগীসহ নানা শ্রেণি ও পেশার লাখো মানুষ। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন মওলানা মো. আনিসুজ্জামান। এরপর তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

চশমা হিলে বাবার কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে সন্ধ্যায় ষোলশহরের চশমাপাহাড় জামে মসজিদের সামনে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হয়।

সারাবাংলা/এটি

আরও পড়ুন:

‘মহিউদ্দিনের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে’
মহিউদ্দিন চৌধুরীর জানাজায় লাখো মানুষের ঢল
মহিউদ্দিন চৌধুরীর জানাজা বাদ আসর লালদীঘি ময়দানে

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুশোকে ভাসছে চট্টগ্রাম
কাঁদছে চট্টগ্রাম!
মাটি ও মানুষের নেতার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
চলে গেলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর