‘আন্দোলন করতে গিয়ে রফতানি বন্ধ হলে আমও যাবে, ছালাও যাবে’
৭ জুন ২০২২ ২০:২২
ঢাকা: তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে যে আন্দোলন করছেন, তার জের ধরে এই খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তেমন প্রভাব পড়লে বেতন বাড়ানো তো দূরের কথা, কারখানা বন্ধের পরিস্থিতি উদ্ভব এবং এর জের ধরে শ্রমিকরা ছাঁটাই পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকদিন আগে থেকে পোশাক শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। আন্দোলন করেন, ঠিক আছে। কিন্তু যেসব দেশ তৈরি পোশাক কিনবে, তাদের কাছ থেকে আমরা এখন একটি ভালো সুবিধা পাচ্ছি। উৎপাদন বাড়ছে। আমরাও ভর্তুকিতে প্রণোদনা দিয়েছি, যেন শ্রমিকরা বেতন-ভাতা ঠিকমতো পায়। এখন বেতন বাড়ানোর আন্দোলন করতে গিয়ে যদি রফতানি বন্ধ হয়, কারখানাই তো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে, ছালাও যাবে। বেতন তো বাড়বেই না, উল্টো চাকরি চলে যাবে। তখন ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবে?
মঙ্গলবার (৭ জুন) সকালে ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
শ্রমিকদের এই আন্দোলনের পেছনে কারা আছেন, সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যে নেতারা উসকানি দিচ্ছেন, তারা কাদের প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছেন, তাও একটু ভেবে দেখতে হবে। কারও কথায় কোনো অশান্তি তৈরি করলে দেশেরই ক্ষতি, নিজেরও ক্ষতি। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। যাদের কথাতেই তারা নাচুক, নেতাদের তো অসুবিধা নেই। তারা যেখান থেকে উসকানি পাচ্ছে, সেখান থেকে ভালো অঙ্কের টাকাও পাবে। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যে কী হবে?
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন তারই কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ছয় দফার গুরুত্বও তুলে ধরে এর ধারাবাহিকতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন জাতির জন্য উৎসর্গ করলেন। যে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করলেন, তারা তাকে হত্যার সাহস পেল না। কিন্তু যে বাঙালির জন্য তিনি সারাজীবন ত্যাগস্বীকার করলেন, তাদের হাতেই তাকে জীবন দিতে হলো। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে!
পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর ফের দেশ অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে চলে গিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আবার বাংলাদেশকে একটু স্থিতিশীলতার মধ্যে আনতে পেরেছি। তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় পেয়েছিলাম বলেই এই ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে দেশকে একটি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম একটি দীর্ঘ সময় গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজ দেশের উন্নতিটা হয়েছে।
টানা মেয়াদে সরকারের থাকার সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করেছি, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইংল্যান্ডেও মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। যে আমেরিকায় এক থেকে দেড় শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি থাকত না, সেখানেও ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমরা ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য যতটাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখছি। আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। আমাদের রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে তুলেছিলাম। আজ সেই রিজার্ভের টাকা আমরা ভেঙে ভেঙে বিদ্যুতের জন্য, গ্যাসের জন্য, কৃষির জন্য, স্বাস্থ্যের জন্য ভতুর্কি দিয়ে যাচ্ছি। আমরা ভ্যাকসিন নিজের পয়সায় কিনে বিনা পয়সায় সবাইকে দিয়েছি। তারপরও যদি কেউ গোলমাল করার চেষ্টা করে আর দেশটা যদি একবারে স্থবির হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে?
বিশ্বব্যাপী এই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ কৃষিতে এগিয়ে থাকায় দেশের মানুষ ভালো আছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। সে কারণেই তিনি ফের আবাদযোগ্য প্রতিটি ইঞ্চি জমিতে চাষাবাদ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান সবাইকে। আর এরকম পরিস্থিতিতেও যদি কেউ দেশে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে চেষ্টা করে, তাতে সব কূল হারাতে হবে বলেও সতর্ক করেন দিয়েছেন তিনি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে, এটি ঠিক। এটি আরও কত বাড়বে, তার ঠিক নেই। কারণ এটি তো বাংলাদেশের বিষয় না, এটি সমগ্র বিশ্বের বিষয়। আমরা বরং আমাদের দেশে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আমরা সামনে বাজেট দিতে যাচ্ছি। সেখানেও চেষ্টা করে যাচ্ছি উন্নয়ন ও সবকিছুর মধ্যে যেন সামঞ্জস্য থাকে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে কেন্দ্রীয় নেতা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা শ্রমিক আন্দোলন